দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

সুদ ভর্তুকি পেনশনে ব্যয় ১.৩৯ লাখ কোটি টাকা

আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদ, ভর্তুকি ও পেনশন পরিশোধে ব্যয় হবে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ৪৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা এবং পেনশন-গ্র্যাচুইটিতে যাবে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। এ তিন খাতের ব্যয় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ২৩ শতাংশ। চলমান করোনাভাইরাসে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই নতুন বাজেটে এই অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হচ্ছে। আর এ ব্যয় সামাল দিতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও বিদেশি সংস্থা থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ ঋণের বিপরীতে পরিশোধ করতে হবে মোটা অঙ্কের সুদ।

ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি খাতেও ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে আগামী বছরের বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এটি উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আসন্ন বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় এই বাজেটের ১১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় হবে ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধে। পাশাপাশি ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পেনশন ও গ্র্যাচুইটিতে যাবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের এ বছর স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও স্বল্পআয়ের মানুষের খাদ্য খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বেড়েছে। আগামী বছরও এসব খাতে আরও ব্যয় বাড়বে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা।

বাইরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের পরিমাণ ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ হচ্ছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। অবশ্য চলতি অর্থবছর সুদ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী অর্থবছরের ভর্তুকি খাতে প্রথমবারের নতুন একটি খাত যোগ হয়েছে। আর সেটি হল ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।

কোভিড-১৯-এর কারণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ভর্তুকি হিসেবে এবার এ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতেই ব্যয় করা হবে ৪৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের এ খাতে বরাদ্দ অর্থের চেয়ে ১৪ ভাগ বেশি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ হচ্ছে ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার কারণে কৃষি খাত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে কৃষি খাতে। এ খাতে ভর্তুকি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ভর্তুকির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতেও ভর্তুকির একটি বিশাল অঙ্ক ধরা হয়েছে।

এখানে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর খাদ্যবাবদ ভর্তুকি দেয়া হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের কারণে দরিদ্রদের স্বল্পমূল্যে চাল সরবরাহ করার জন্যই এ খাতে বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে। রফতানি ও রেমিটেন্স খাতে প্রণোদনার জন্য রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। আর ব্যাংক ঋণ সুদ খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, কোভিডের কারণে সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ভর্তুকি হিসেবে ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনিু ৪ দশমিক ৫ থেকে ৯ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হবে। এ সুদের ব্যয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরকারকেই বহন করতে হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া এলএনজি খাতে ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি কমিয়ে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা বিদ্যুৎ খাতেও। আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি গুনতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। শুধু চুক্তির শর্ত পরিপালনের জন্য কোনোরূপ বিদ্যুৎ না কিনেও বেসরকারি খাতে রেন্টাল পাওয়ার কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সরকারের প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে আছেন। নিয়মানুযায়ী নতুন অর্থবছরে অনেকে অবসরে যাবেন। এ জন্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। চলতি সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ২৭ হাজার ৯০ কোটি টাকা।