দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

স্ববিরোধী তথ্যে ভরপুর প্রস্তাবিত বাজেট

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে অবাস্তব আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) বলেছে, বাজেটের তথ্য-উপাত্ত স্ববিরোধিতায় ভরপুর। একটির সঙ্গে অপরটির মিল নেই। বাস্তবতাকে এড়িয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত চলে- শুধু এমন আশাবাদের ওপর ভর করে বাজেটে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার আইবিএফবি আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এসব কথা বলেছে। সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন রশিদের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারীর কারণে অর্থনীতির ভয়াবহতা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। করোনার মহামারী থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেয়া হয়নি।

শুধু আগে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোর বিবরণ দেয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও এ অর্থ কীভাবে খরচ করা হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অন্যান্য খাতে গতানুগতিক ধারায় বাজেট তৈরি করা হয়েছে।

সংগঠনটি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাগুলো এমনভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে যাতে মনে হবে, করোনাভাইরাস দেশ থেকে জুলাই-আগস্টে চলে যাবে। ফলে আগামী অর্থবছরের দুই ছাড়া বাকি ১০ মাসে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারবে। এতে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বাস্তবতা হচ্ছে চলতি অর্থবছরে অর্থনীতিতে করোনার আঘাত এসেছে তিন মাস। এই তিন মাসেই অর্থনীতি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবে জিডিপি কমেছে ৪ শতাংশ। বেসরকারি হিসাবে এ হার কমবে ৬ শতাংশের বেশি।

বাজেটে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেছে, এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপ কমবে। কর্পোরেট কর শুধু একটি খাতে কমানো হয়েছে। এর ফলে ওই খাতটি উপকৃত হবে।

তারা বলেছে, রাজস্ব আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির কিছু সূচকের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত হওয়া দরকার। এসবের বিশ্লেষণে গেলে স্ববিরোধিতা ফুটে ওঠে। বাজেটের লক্ষ্য তখনই পূরণ হবে যদি শক্তিশালী করোনাভাইরাস অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্বল হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। একই সঙ্গে আরও কিছু ঘটনা দ্রুত ঘটতে হবে, বিশ্বমন্দা দ্রুত কেটে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বাড়বে, প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, দেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থ থাকবে, বাড়বে চাহিদা, কেউ চাকরি হারাবেন না, কারও বেতনও কমবে না।

এই বিষয়গুলো দ্রুত অর্জিত হলেই কেবল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব। এছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে দ্রুত এগুলোর কোনোটিই অর্জিত হবে না। ফলে বাজেটের লক্ষ্যগুলো অর্জিত হবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। অথচ বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশ বাড়াতে ৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে যে অর্থনীতিতে, যখন সেই অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস বেসরকারি খাতনির্ভর বেসরকারি বিনিয়োগ এক অর্থবছরেই জিডিপির ২৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে গেছে। সেখানে এই লক্ষ্য কীভাবে অর্জিত হবে।

সংগঠনটি বলেছে, করোনার মধ্যে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে বড় উল্লম্ফন হতে যাচ্ছে- এ ধরনের অনুমান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভুল বার্তা দেবে। এটি কোভিড মোকাবেলায় তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ বছর আপাতত প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানুষের নজর জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থান কতটা টিকে থাকবে সেদিকে।