দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক ইউকে

ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ১৬ আগস্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লন্ডনের সোনালী ব্যাংক, যা সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড নামে পরিচিত। ২১ বছরের মাথায় এসে এই প্রতিষ্ঠানটির অপমৃত্যু ঘটছে। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে সোনালী ব্যাংক ইউকের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানোর সেবা। আর আগামীকাল রোববার থেকে বন্ধ হবে মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইন রেমিট্যান্স সেবা।

তবে সোনালী ব্যাংক ইউকের জায়গায় ও শাখাগুলোতে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হচ্ছে। এটি অবশ্য প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের পরিবর্তে শুধু বৈদেশিক বিল ও ঋণপত্রের দর সমন্বয়ের কাজ করতে পারবে। সোনালী ব্যাংক ইউকের মতো নতুন প্রতিষ্ঠানটিতেও বাংলাদেশ সরকারের ৫১ শতাংশ ও সোনালী ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ শেয়ার থাকবে।
পাশাপাশি প্রবাসী আয় আনতে সোনালী পে ইউকে লিমিটেড নামেও একটি প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। তবে এখনো এর অনুমোদন দেয়নি যুক্তরাজ্যের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এক সময় লন্ডন সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ছিলেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান। সোনালী ব্যাংক ইউকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যোগাযোগ করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহও বক্তব্য দিতে চাননি এ বিষয়ে।

খুচরা আমানত গ্রহণ, হিসাব খোলা ও ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পর সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড সীমিত আকারে ঋণপত্রের নিশ্চয়তা ও বাণিজ্য অর্থায়ন (ট্রেড ফাইন্যান্স) করে আসছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থার জরিমানা আরোপ করায়, একাধিক শাখা বন্ধ করে দেওয়ায় এবং অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও লোকসানের কারণে ঝুঁকিতে পড়ে যায় সোনালী ব্যাংক ইউকের কার্যক্রম। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স হারায়। ফলে বাণিজ্য অর্থায়ন, প্রবাসী আয় সংগ্রহসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সেবা দিতে সোনালী ব্যাংক ১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যে সোনালী ট্রেড অ্যান্ড ফাইন্যান্স নামে কার্যক্রম শুরু করে। পরে ২০০১ সালের সেটি ব্যাংকে রূপান্তর হয়। তখন প্রবাসী আয় সংগ্রহের পাশাপাশি ঋণপত্রের (এলসি) নিশ্চয়তা দেওয়া শুরু করে, আর প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড। এরপর ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। এতেই ঘটে বড় দুর্ঘটনা। ব্যাংকটির মালিকানার ৫১ শতাংশ বাংলাদেশ সরকারের, বাকি ৪৯ শতাংশ সোনালী ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠানটিকে চালাতে সরকার ও সোনালী ব্যাংক মিলে দফায় দফায় মূলধন জোগান দেয়। আবার ব্যবসা করতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও অর্থ দেওয়া হয়েছে। কয়েক দফায় মূলধন জোগান দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মূলধন দাঁড়ায় ৬ কোটি ৩৮ লাখ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮৭ কোটি টাকা। এর বাইরে সোনালী ব্যাংক ইউকেতে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়েছে সোনালী ব্যাংক, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে ব্যাংকটি ঋণপত্রের নিশ্চয়তা, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ ও বিল ডিসকাউন্টিং ব্যবসা করছিল।

২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অর্থ পাচার প্রতিরোধব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডকে ৩২ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে সেই দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি (এফসিএ)। বন্ধ করে দেয় নতুন হিসাব খোলার সেবা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক ইউকের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান স্টিভেন স্মিথকে এ ধরনের চাকরিতে নিষিদ্ধ ও ১৮ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়। এ সময় ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খোন্দকার মো. ইকবাল ও আতাউর রহমান প্রধান।

লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় ১৬ আগস্ট থেকে সোনালী ব্যাংক ইউকের সব সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। এ নিয়ে ব্যাংকটির গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ের সেবা দিতে ১৬ আগস্টের আগেই সোনালী পে ইউকে লিমিটেড নামে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করা হবে। এরপর আবার জানানো হয়, সোনালী পে ইউকে লিমিটেডের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এ জন্য ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, স্মল ওয়ার্ল্ড, রিয়ার মাধ্যমে আয় পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যাংকটিতে এসে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানোর সেবা। আর ১৪ আগস্ট থেকে বন্ধ হবে মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইনে রেমিট্যান্স পাঠানোর সেবা।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হলেও লন্ডনের প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলোতে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের বৈদেশিক বিল ও ঋণপত্রের দর সমন্বয় করা যাবে। তবে অন্য কোনো সেবা দেওয়া যাবে না। ব্যাংকের পুরোনো কর্মীরাই এই সেবা দেবেন। সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি আতাউর রহমান প্রধানের মেয়াদ ২৭ আগস্ট শেষ হচ্ছে। তাই তাঁকে আবারও নিয়োগ দিতে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৭৮২তম সভায় সোনালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে আতাউর রহমান প্রধানের তিন বছরের সফলতা ও ব্যাংকের কর্মকৃতির (পারফরম্যান্স) ওপর জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁর অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, বয়স বিবেচনা করে এবং ব্যাংকের স্বার্থে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে তাঁর বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত পুনর্নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তা অনুমোদন করা হলে তিনি আরও ২ বছর ৪ মাস ৪ দিন সোনালী ব্যাংকের এমডি থাকার সুযোগ পাবেন।