দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাধাগ্রস্ত রফতানি খাত

করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পোশাক খাত তখনই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে পড়েছে। এতে পোশাক খাতের পাশাপাশি রফতানি খাত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ সংস্থা শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ অধিদফতর (ডেডো) নতুন সহগ (পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল পরিমাপের একক) ইস্যু ও পুরান সহগ নবায়ন না করায় জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা বন্ড কমিশনারেট ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন বা কাঁচামাল ব্যবহারের অনুমতি) না দেয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রফতানিকারকরা। সমস্যা সমাধানে টেক্সটাইল খাতের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে ডেডো থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডেডো বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় রফতানি পণ্যের সহগ (নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনে কী পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন তা নির্ণয় পদ্ধতিকে সহগ) এবং সমহার (রফতানিকৃত পণ্যের শুল্ক ফেরত দেয়ার পদ্ধতি) ইস্যু করে থাকে।

একাধিক রফতানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেডো সহগ ইস্যু বা নবায়ন না করায় তারা নতুন জটিলতায় পড়ছেন। কারণ ঢাকা বন্ড কমিশনারেট সহগ ছাড়া ইউপি ইস্যু করছে না।

আর ইউপি ছাড়া কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য রফতানি করলেও জরিমানা আরোপ করে বন্ড কমিশনারেট। ক্ষেত্র বিশেষে এটিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। পরে তা নিষ্পত্তি করতে বেগ পোহাতে হয়। এমনও নজির আছে, দ্রুত অর্ডার সরবরাহের তাড়া থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান ইউপি না নিয়ে পণ্য রফতানি করেও এখন বন্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে।

সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন), পিআরসি (রফতানির অর্থ প্রত্যাবাসন সনদ) থাকার পরও বন্ড কাঁচামাল অপসারণের দায়ে সুদসহ আমদানি শুল্ক দাবি করে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে। ওইসব বিষয়ে এখনও নিষ্পত্তি করতে পারছেন না তারা। এ কারণে রফতানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব ডেডোতে স্পেশালিস্ট নিয়োগ দেয়া উচিত। কারণ করোনার কারণে এমনিতেই পোশাক খাতের অবস্থা ভালো নয়। ক্রেতারা কথায় কথায় অর্ডার বাতিল করছে, পণ্যের দাম কমিয়ে দিচ্ছে, অযাচিত শর্তারোপ করছে।

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক রফতানিকারকদের মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ড কমিশনারেট। তবে কেন ডেডোর কাছ থেকে সহগ নিতে হবে? যদি স্পেশালিস্ট নিয়োগ দিতেই হয় তাহলে বন্ডে নিয়োগ দেয়া হোক। এক জায়গা থেকে সহগ ও ইউপি নেয়া যাবে।

টেক্সটাইল খাতের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে এনবিআরে চিঠি দিয়েছে ডেডো। এতে বলা হয়েছে, ডেডোতে বর্তমানে দুজন সেক্টর স্পেশালিস্ট আছে। এর মধ্যে একজন ইলেকট্রিক্যাল ও একজন কেমিক্যাল স্পেশালিস্ট। টেক্সটাইল খাতে স্পেশালিস্ট নেই। ২০১৬ সালের ২৭ মে থেকে পদটি শূন্য আছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ৩ সেক্টরের বাইরে লেদার গুডস, লেদার প্রসেসিং, সিরামিক, সিভিল ইঞ্জিরিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটালর্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড প্রসেসিং সেক্টরের সহগ জারি করা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেক্টরগুলোতে স্পেশালিস্ট না থাকায় বর্তমানে কর্মরত দুজন স্পেশালিস্ট ও একজন কস্ট অ্যাকাউন্টেন্টের সমন্বয়ে স্টেকহোল্ডারদের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠান জরিপ করে জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে সহগ নির্ধারণ করা হয়।

ক্ষেত্র বিশেষে সহগ প্রস্তুতের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান যেমন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইন্সটিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সহায়তা নেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে রফতানিকারকরা বলছেন, ডেডোতে সেক্টর স্পেশালিস্ট না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক খাত। এখন ডেডোতে সহগ নবায়ন করতে গেলে বুটেক্সের সুপারিশ আনতে বলা হচ্ছে।

বুটেক্সে চিঠি দিলে কবে সুপারিশ পাওয়া যাবে তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে রফতানিকারকদের ইউপি নিতে হয়। আবার ইউপি ছাড়া রফতানি করলেও জরিমানাসহ বন্ড লাইসেন্স নবায়নে ঝামেলা পোহাতে হয়। এভাবে একটার পর একটা ঝামেলা তৈরি হলে ব্যবসা আগাবে কীভাবে?