দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

টিআইএন নেই ৯৮ হাজার কোম্পানির

সরকারের খাতায় নিবন্ধিত ৯৮ হাজার বেসরকারি কোম্পানির কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন নেই। কোম্পানি হিসেবে তারা করও দেয় না। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই অনিয়ম রোধে গতকাল একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে এনবিআর। এ ছাড়াও বহু কোম্পানি যথাযথ কর দিচ্ছে না। আবার অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে জাল ও ভুয়া অডিট রিপোর্ট দাখিলের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে দেশে জয়েন্ট স্টকে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০টি। এনবিআরের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৮ হাজার কোম্পানির কোনো ট্যাক্স পেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন নেই। অর্থাৎ নিবন্ধিত কোম্পানির ৫৭ শতাংশই করের আওতার বাইরে। অবশ্য এসব কোম্পানির বেশিরভাগই লোকসানি। ছোট ও মাঝারিমানের অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ কিংবা সচল নয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠানের টিআইএন আছে, তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রিটার্ন জমা দেয় না। বর্তমানে রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত অর্থাৎ টিআইএন রয়েছে- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৬ হাজার। গত করবর্ষে রিটার্ন জমা দিয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি রিটার্ন জমা দেয় না। অথচ আইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

কোম্পানি করদাতার ক্ষেত্রে এসব অনিয়ম রোধে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। এনবিআরের কেদ্রীয় গোয়েন্দা সেল বা সিআইসির এক পরিচালকের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের এই টাস্কফোর্সের কর্মপরিধিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি করদাতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে টাস্কফোর্স। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনবিআরের সিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, জয়েন্ট স্টকে নিবন্ধনের সময় শুধু পরিচালকের টিআইএন লাগে। কিন্তু এনবিআরের নিবন্ধন (করের আওতায়) করতে হলে প্রতিষ্ঠানের টিআইএন লাগে। দেখা যায়, পরিচালকের টিআইএন থাকলেও প্রতিষ্ঠানের নামে টিআইএন করা হয় না।

আয়কর আইনে করদাতা দুই ধরনের। ব্যক্তিশ্রেণি করদাতা এবং কোম্পানি করদাতা। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান মুনাফার ওপর প্রযোজ্য হারে কর দেয়, যাকে বলা হয় করপোরেট কর। সংখ্যার দিকে থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিশ্রেণির চেয়ে কোম্পানি করদাতা কম হলেও করপোরেট কর থেকে আদায় হয় বেশি। মোট করদাতার মাত্র ২ শতাংশ কোম্পানি কর দেন। এদের থেকে মোট আয়করের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আসে।

জানা যায়, টাস্কফোর্স মূলত তিনটি বিষয়ে কাজ করবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের টিআইএন নেই তাদের খুঁজে বের করবে। যারা রিটার্ন জমা দেয় না তাদের তালিকা করবে। এ ছাড়া কর বিভাগের কাছে কারা জাল বা ভুয়া অডিট রিপোর্ট জমা দেয়, তাদের চিহ্নিত করবে। এসব অনিয়ম বের করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।

ব্যক্তিশ্রেণি করদাতার মতো কোম্পানিকেও আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় এবং এটা বাধ্যতামূলক। না দিলে জরিমানা দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক হিসাব ক্লোজের ছয় মাসের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান সমকালকে বলেন, এটা ঠিক, অনেক কোম্পানি তাদের অডিট রিপোর্টে সঠিক তথ্য দেয় না। এর জন্য শুধু অডিটরকে দায়ী করলে হবে না। আমাদের অডিট সিস্টেমের দুর্বলতা আছে। এই জায়গাটায় উন্নতি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অডিটের মান নিশ্চিত করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেশন কাউন্সিল করা হলেও ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে অনেকেই এর অপব্যবহার করছে। তিনি জানান, আমরা যারা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছি, অনেক সময় সবকিছু নিখুঁতভাবে দেখার সুযোগ হয় না। ফলে এর জন্য প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বিদেশিরা এ দেশের হাতেগোনা স্বীকৃত ও খ্যাতনামা চার্টার্ড ফার্ম ছাড়া অন্য কোনো ফার্মের রিপোর্ট গ্রহণ করতে চায় না। সুতরাং অডিট রিপোর্টকে একটা বিশ্বাসযোগ্য অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।


একাধিক অডিট তৈরির অভিযোগ : আইন অনুযায়ী, কোম্পানিকে রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে নিরীক্ষিত অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হয় কর বিভাগের কাছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি কোম্পানি একাধিক অডিট রিপোর্ট করে একটি শেয়ারহোল্ডারের জন্য। একটি কর বিভাগের জন্য। একটি কোম্পানি নিজের জন্য রাখে। এটা করা হয় কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য।

সূত্র জানায়, গত বছর ৩৫ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দিয়েছে। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবির) তথ্যমতে, এর মধ্যে ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, মানসম্মত অডিট রিপোর্টের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে এনবিআর। এ জন্য আইসিএবির সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এ বিষয়ে নতুন আইন করার চিন্তাভাবনা চলছে।