দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

শ্রীলঙ্কায় আইএমএফের ঋণ অনুমোদন এ মাসেই

শ্রীলঙ্কা চলতি মাসের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি আরও বলেছেন, চীন থেকে নতুন সমর্থন পাওয়ার কারণে তহবিলসংক্রান্ত সব শর্ত পূরণ হয়েছে।

ব্রিটেন থেকে ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র এখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি একটি কঠিন সময়ও পার করছে।

প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে সংসদে বলেন, অর্থনীতির উন্নতি ঘটছে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সব ধরনের পণ্য আমদানি করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এখনো দেশটির হাতে নেই। তিনি বলেন, এ কারণে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি হওয়া খুব জরুরি, কারণ এর ফলে অন্য ঋণদানকারীরা অর্থ ছাড় করতে শুরু করবে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, আইএমএফ যত রকমের পদক্ষেপ নিতে বলেছিল, শ্রীলঙ্কা তার সবগুলোই সম্পন্ন করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক সোমবার একটি নতুন চিঠি পাঠিয়েছে এবং তিনি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আইএমএফের কাছে ঋণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন।

এ পদক্ষেপ এবং ভারত ও প্যারিস ক্লাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির কারণে আমরা আশা করছি যে মার্চের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহে (আইএমএফের) কর্মসূচির ব্যাপারে অনুমোদন দেওয়া হবে তিনি যোগ করেন।

এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার বন্ডের দাম প্রায় তিন সেন্ট বেড়েছে। অন্যদিকে দেশটির মুদ্রা প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে সোমবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা চীন ঠিক কী ধরনের নতুন সমর্থন শ্রীলঙ্কাকে দিয়েছে।

জানুয়ারি মাসে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধ দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখতে শ্রীলঙ্কাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা বলেছিল, আইএমএফের ঋণ পেতে শ্রীলঙ্কাকে সমর্থন করা হবে। তখন শ্রীলঙ্কার একটি সূত্র বলেছিল যে ওই প্রতিশ্রুতি আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি ঋণ পেয়েছে চীন ও ভারত থেকে। আইএমএফের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সাল নাগাদ শ্রীলঙ্কার কাছে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের পাওনা ছিল ২৮৩ কোটি ডলার বা দেশটির মোট আন্তর্জাতিক ঋণের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইতিবাচক দিক

সব মিলিয়ে চীনের ঋণদাতাদের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ দাঁড়িয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার বা মোট আন্তর্জাতিক ঋণের ৫ ভাগের ১ ভাগ। চীন আফ্রিকা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তৈরি করা হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শ্রীলঙ্কার রুপি শক্তিশালী হয়েছে এবং প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩২৫ রুপিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দাম বেঁধে দিয়েছে, রুপি তার চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পর্যটন বেড়ে যাওয়ার ফলে আরও ডলার আসা, বেশি করে প্রবাসী আয় পাওয়া, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা এবং আমদানি কমে যাওয়ার কারণেই এ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

বিনিয়োগবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএএল রিসার্চের প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট উদিশান জোনাস বলেন, আইএমএফের সম্ভাব্য ঘোষণার অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। আর্থিক পুনরুদ্ধারের প্যাকেজের অনুমোদন হয়ে গেলে আরও বেশি ডলার আসবে।
উদিশান জোনাস আরও বলেন, যাঁরা ডলার মজুত করে রেখেছিলেন, তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং ডলার ভাঙিয়ে ফেলছেন, কারণ রুপির দাম বাড়ছে। রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, শ্রীলঙ্কাকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৬০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে এবং আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে।

জাম্বিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশকে আইএমএফের ঋণ পেতে নজিরবিহীন বিলম্ব পোহাতে হয়েছে, কারণ ঋণ মওকুফ সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে চীন এবং পশ্চিমা দেশগুলো সহজে একমত হতে পারেনি। আইএমএফের সঙ্গে একটি কর্মকর্তা পর্যায়ের চুক্তি হওয়ার পর ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে শ্রীলঙ্কাকে ১৮৭ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। রয়টার্সের হাতে থাকা তথ্য বলছে, দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশের ক্ষেত্রে গত দশকে এ কাজ করতে গড়ে ৫৫ দিন সময় লেগেছে।