TAXNEWSBD
করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ করার সুপারিশ অর্থনীতিবিদদের
মঙ্গলবার, ০৫ মে ২০২০ ০২:১১ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় উচ্চ ও নিম্নবিত্তদের জন্য ইতোমধ্যে প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে মধ্যবিত্তরা। বর্তমানে তারা অনেকটা অসহায়। এ অবস্থায় তাদের সহায়তায় আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করের হার কমানো এবং করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এক্ষেত্রে বর্তমান করমুক্ত আয়সীমা আরও ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও করদাতাদের প্রথম ৩টি স্তরে কর ৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির বাজেট প্রস্তাবনায় এ সুপারিশ করা হয়।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটি খুব স্বাভাবিক যে, এই দুর্যোগে মধ্যবিত্তরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারের ওইভাবে পরিসংখ্যানও নেই। ফলে তাদের আয় বাড়ানোর পথও নেই। এক্ষেত্রে তাদের আয়কর কিছুটা কমানো যেতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে করের যে হার রয়েছে, সেটি কিছুটা কমিয়ে আনা উচিত। এছাড়াও বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি কয়েক বছর আগে নির্ধারণ করা। এরপর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। নতুন করে আবার করোনা পরিস্থিতি যোগ হয়েছে। সবকিছু মিলে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা যায়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেটে প্রস্তাবনায় বলা হয়, মানুষের কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত আয় কমেছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বর্তমানে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগামী বাজেটে তা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা উচিত। সিপিডির প্রস্তাবে নিম্নের তিন স্তরে আয়কর ৫ শতাংশ কমাতে বলা হয়।

অর্থাৎ মধ্যবিত্তদের সহায়তায় বর্তমানে যারা আয়ের ১০ শতাংশ হারে কর দেন, আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশ করতে বলা হয়। এছাড়া ১৫ শতাংশ কর হারকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং ২০ শতাংশের স্তরে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। জানতে চাইলে সিডিপির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিকাশমান মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তাদের জন্য করের হার কমানো উচিত।

তিনি বলেন, দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ লোক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেতনে চাকরি করছেন। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এদের বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।

চলতি অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি এই অংকের আয় করলে তার আয়কর দিতে হবে না। এরপর পরবর্তী ৪ লাখ টাকা আয়ের জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখের জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৬ লাখের জন্য ২০ শতাংশ, পরবর্তী ৩০ লাখের জন্য ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। এছাড়া মহিলাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ, প্রতিবন্ধীদের ৩ লাখ ৭৫ হাজার এবং গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অনিবাসী করদাতার করহার ৩০ শতাংশ।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দাদের সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে ৪ হাজার এবং সিটি কর্পোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা কর দিতে হয়। আর এই হার ৫ বছর আগের নির্ধারণ করা। বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই এটি কমানোর সুপারিশ করা হয়।

করোনার মোকাবেলায় নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার নেই। ফলে এদিকে খাবার কিনতেও পারছেন না, অপরদিকে সামাজিক মর্যাদার কারণে কারও কাছে চাইতেও পারছেন না। নীরবেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। ৫টি মৌলিক চাহিদার ৪টি নিয়ে চিন্তিত তারা।

বিশেষ করে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন বর্তমানে মধ্যবিত্ত যে পর্যায়ে আছে, তা হয়তো সহনীয়।

কিন্তু অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এরাই সবচেয়ে বিপদে পড়বেন। তাদের মতে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। তবে বণ্টন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আর মধ্যবিত্তের কোনো পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। ফলে এদের কাছে খাবার পৌঁছানো খুব কঠিন। অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে তাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদণ্ডে আনতে হবে।

ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৪ কোটির মতো। তবে উলেখযোগ্য অংশই নিম্নমধ্যবিত্ত। এরা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা ও দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে দেশ লকডাউন হওয়ায় বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কারণে কারও কাছে টাকা-পয়সা বা খাবার চাইতে পারে না। নীরবে দিন পার করতে হচ্ছে এদের।