TAXNEWSBD
প্রতি মাসে ১০১ ভ্যাটদাতা জিতবেন নগদ টাকা
বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৪ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

আপনি ভ্যাট দিয়ে প্রতি মাসে লাখ টাকা পুরস্কার জিতে নিতে পারেন। এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্যি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবার ভ্যাটের চালান বা রসিদের মাধ্যমে লটারির আয়োজন করেছে। তবে এই রসিদ যেনতেন রসিদ নয়; এই রসিদ হতে হবে ভ্যাটের মেশিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা রসিদ। এর মানে, লটারি জিততে হলে আপনাকে কোনো পণ্য কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিনের রসিদ সংগ্রহ করতে হবে। কারণ, রসিদ নম্বরের ওপর প্রতি মাসেলটারি হবে।

এই লটারির প্রথম পুরস্কার বিজয়ী একজন পাবেন ১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কারও পাবেন একজন। এটির মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় পুরস্কারে পাঁচজন বিজয়ীর মধ্যে প্রত্যেকে ২৫ হাজার টাকা করে পাবেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০১ জন ভ্যাটদাতা লটারিতে বিজয়ী হবেন। বিজয়ী বাকি ৯৪ জনকে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ এই লটারির আয়োজন করবে। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে লটারির আয়োজন করা হবে, তা নিয়ে গতকাল সোমবার একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। অবশ্য কবে থেকে লটারি চালু করা হবে, তা এখনো ঠিক করেনি এনবিআর। ভ্যাটদাতাদের ভ্যাটের রসিদ নেওয়ায় উৎসাহিত করতেই এনবিআর এই উদ্যোগ নিয়েছে।

যেভাবে লটারি হবে

জানা গেছে, এনবিআরের কেন্দ্রীয় অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লটারির আয়োজন করা হবে। প্রতি মাসে লটারি বিজয়ীদের জন্য মোট ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে।

ইএফডি মেশিন বা ভ্যাটের মেশিন আছে, এমন দোকান থেকে পণ্য বা সেবা কিনলেই শুধু লটারির জন্য বিবেচনা করা হবে। পাকা রসিদ হতে হবে, কাঁচা বা দুই নম্বরি রসিদ হলে হবে না। ভ্যাট মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে রসিদ দেবে, সেই রসিদের নম্বর ধরেই লটারি হবে।

পণ্য বা সেবা কেনার সময় যে রসিদ দেওয়া হয়, সেটিই লটারির কুপন হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রতি ইংরেজি মাসের ৫ তারিখে লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন সরকারি ছুটি থাকলে পরবর্তী কার্যদিবসে ড্র হবে। লটারির ড্র অনুষ্ঠানের তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিজয়ীদের কুপন নম্বর প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। তারপর বিজয়ীদের ওই মাসের শেষ কার্যদিবসের মধ্যে পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর কুপন নম্বর মিলিয়ে দেখাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই বাছাই করা হবে। আবেদনপত্রে আবেদনকারীর নাম, সই, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), চালান নম্বর, ইস্যুর তারিখ থাকতে হবে।

প্রথম তিনটি পুরস্কার এনবিআর থেকে দেওয়া হবে। বাকি পুরস্কারগুলোর বিজয়ীদের মধ্যে যিনি এনবিআরের যে দপ্তরে আবেদন করবেন, সেখান থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের অর্থ চেকের মাধ্যমে পাবেন বিজয়ীরা।

যেকোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান, অনুমোদন এবং অনুমোদনের পর তা বাতিলের ক্ষমতা থাকবে পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গতকাল বলেন, এখন পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসেছে। পরীক্ষামূলক অবস্থায় লটারির আয়োজন করা নাও হতে পারে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ ৫ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসলে লটারির আয়োজন শুরু হতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

দেশে গত ২০১৯ সালের জুন মাসে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়েছে। এ আইনের আওতায় এনবিআর স্বয়ংক্রিয় ও অনলাইনভিত্তিক করব্যবস্থা প্রবর্তনের নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো। বর্তমানে দেশের সব সিটি করপোরেশন ও জেলা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন পণ্য ও সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো বাধ্যতামূলক। ইতিমধ্যে এনবিআর পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো শুরু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা কিনলে ওই মেশিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূসক ৬.৩ চালান ইস্যু করতে হবে। সেই চালানটিই লটারির কুপন হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ওই চালান রসিদটির মাধ্যমে কর আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠান করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। তাই ক্রেতারা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চালান রসিদ বুঝে নেন বা নিতে আগ্রহী হন, সে জন্য লটারির আয়োজন করা হয়েছে।

পণ্য কেনার সময় ভ্যাটের ইএফডি মেশিনের চালান নম্বর দিয়ে প্রতি মাসে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। আগামী মার্চে শুরু হতে পারে লটারি।