TAXNEWSBD
কাঁচামরিচ ভারত থেকে কাঁচামরিচের  আমদানি শুরু
মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট ২০২১ ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

দেশে সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় ভারত থেকে কাঁচামরিচের  আমদানি শুরু হয়েছে। গত চার দিনে ১৫০ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি হলেও বাজারে এর কোনও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। উল্টো কাঁচামরিচের বাজারকে আরও অস্থির করে রেখেছে। ভারত থেকে আমদানি করা আগাপঁচা কাঁচামরিচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আমদানি করা কাঁচামরিচ বাজারে প্রভাব ফেলেনি।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে ২৫ টাকা কেজিতে আমদানি করা হচ্ছে কাঁচামরিচ। এসব মরিচের অধিকাংশই আগা পঁচা। কিন্তু আগাপঁচা সেই মরিচই দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। আমদানিকারকরাই সিন্ডিকেট করে দেশি মরিচের দামে আমদানিকৃত মরিচ বিক্রি করছে। অথচ বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কাঁচামরিচের দাম কমবে এমন প্রত্যাশায় ভারত থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
 গতকাল শনিবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুই ট্রাকে ভারত থেকে ২৩ হাজার ৫৬২ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর এই বন্দর দিয়ে মরিচ আমদানি শুরু হয়। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েও বৃহস্পতিবার ১২ আগস্ট পর্যন্ত গত চার দিনে ১৫০ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আ. জলিল।
কাঁচামরিচের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হলেও দেশে ঢুকেই বেড়ে যাচ্ছে মরিচের দাম। ২৫ টাকা কেজিতে আমদানি করা কাঁচামরিচ দেশের বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, গত শনিবার ১৪ আগস্ট হিলির হাটবাজারে ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ। আমদানির পরও দাম না কমায় অসন্তোষ ক্রেতারা।

 সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় ভারত থেকে দেশে কাঁচামরিচের আমদানি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমদানিকারকদের অনুকূলে প্রয়োজনীয় আমদানি পারমিট (আইপি) ইস্যু করা হয়েছে। দেশের ভোমরা ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে এসব মরিচ আমদানি হচ্ছে।

সোমবার (৯ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এদিন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দুই ট্রাক কাঁচামরিচ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কাঁচামরিচ বোঝাই আরও ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের প্রক্রিয়া চলছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে মরিচ আমদনি করছে।

জানা গেছে, বগুড়ার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এক ট্রাকে ১২ হাজার ৮৮২ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি করেছে। ভারতের আসামের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জমির উদ্দিন রফতানি করেছে। অপর ট্রাকে ১০ হাজার ৬৮০ কেজি কাঁচামরিচ আমদানি করেছে হিলির খন্দকার এন্ট্রারপ্রাইজ। ভারতের শিপিং লাইন এসব মরিচ রফতানি করেছে। হিলি স্থলবন্দরে এসব কাঁচামরিচ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা বললেও পাইকার না থাকায় রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোয়য় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচামরিচের দাম সহসাই কমছে না। আমদানি করলেও বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। ফলে দামে কোনও পরবর্তন হয়নি। আমদানির আগেও দেশের বাজারগুলোয় প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা দরে। এখনও তাই।

কারণ ব্যাখ্যা করে শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ভারত থেকে যে মরিচ বাজারে এসেছে তার আগায় পচন ধরেছে। ফলে এ মরিচের চাহিদা কম। অপরদিকে দাম বেশি। দেশে ভালোমানের কাঁচামরিচ যেখানে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হতো, সেখানে ভারতীয় আগাপঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা।

বগুড়ার কৃষক জয়নাল মিয়া জানিয়েছেন, এই মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেলে মরিচের গাছ মরে যায়। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ে। পানি কমে গেলে আবার নতুন করে মরিচ আবাদ করতে কিছুদিন সময় লাগে। এই সংকটকালীন সময় বাজারে মরিচের সরবরাহ বাড়াতে ভারত থেকে প্রতিবছরই আমদানি করতে হয় কাঁচামরিচ।

তিনি জানান, কখনোই আমদানি করা মরিচের দাম দেশি মরিচের তুলনায় বেশি হয় না। কম হয়। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু এ বছর দেশি মরিচের তুলনায় আমদানি করা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় বাজার আরও অস্থির হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই দেশি কাচামরিচের তুলনায় আমদানি করা মরিচের দাম বেশি হওয়ার কথা নয়। আবার কম দামে এনে অস্বাভাবিক বেশি দামেও বিক্রি করার কথা নয়। কেউ যদি অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনে বাজারকে অস্থির করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কাঁচামরিচ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ  জানিয়েছেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে বাজারে কাঁচামরিচের  সরবরাহ কমে গেছে। এতে দাম বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে কাঁচামরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। চলতি মাসের শুরুতেই আইপির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে আইপি পেতে দেরি হওয়ায় কাঁচামরিচ আমদানিতে সময় লেগেছে।