বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

সরকারের ব্যয় কমিয়ে সংশোধন হচ্ছে বাজেট

চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে সংশোধন করা হচ্ছে চলতি বাজেট। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়গুলোকে কোনোভাবে নতুন করে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে না। আর কোনোক্রমইে উন্নয়ন খাতের অব্যয়িত অর্থ ভিন্ন খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। পাশাপাশি নতুন এবং চলমান প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত অর্থ থেকে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ও বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দ দেয়া যাবে না। এগুলোসহ আরও মোট ২৪ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এসব নির্দেশনা পরিপত্র আকারে জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃচ্ছ সাধন নীতির আলোকে সরকার সব ধরনের যানবাহন ক্রয় আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা যাবে না। পাশাপাশি ইতোপূর্বে যানবাহন কেনার জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে না। সেখানে আরও বলা হয়, কৃচ্ছ সাধন নীতির আলোকে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ খাতের ৫০ শতাংশ ব্যয় আগেই স্থগিত করা হয়েছিল। ফলে সে খাতের অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই অন্য খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও প্রণোদনা খাতে আরও ব্যয় বাড়তে পারে। কোনো খাতে বরাদ্দ দাবি করা যাবে না এটি অবধারিত নয়। প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার হতে পারে। তবে যে নির্দেশনা অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করেছে এটি করোনার জন্য আর্থিক ব্যয়ে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। উন্নয়ন খাতে অননুমোদন প্রকল্পে বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে বরাদ্দ বন্ধ রাখা উচিত। কারণ অনুমোদন প্রকল্পেই ঠিকমতো বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, বাজেট সংশোধন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এটি করা হয়। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটে ভিন্নতা রয়েছে। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ব্যয়ও বাড়ছে। ফলে সরকার এক ধরনের আর্থিক চাপের মধ্যে আছে। চলতি বাজেটের ব্যয় সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ২০৩ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা নিয়েছে। পাশাপাশি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট সংশোধনের মাধ্যমে ছোট করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই হচ্ছে এবারের মূল লক্ষ্য। এ জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ব্যয় নিয়ন্ত্রণকে। ফলে বাজেট ঘোষণাকালীন মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রথমে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার মধ্য থেকে আরও কমিয়ে আনা হবে। নতুন করে কোনো বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে মূল বাজেটের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যয় (পরিচালনা ও উন্নয়ন) শেষ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বাজেটে সরকারের পরিচালনা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নির্দেশনার মধ্যে বলা হয়, অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে বিগত (২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস এবং চলতি অর্থবছরের ৪-৫ মাসের প্রকৃত ব্যয়কে।

এর ভিত্তিতে প্রকৃত পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া একমাত্র মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া সরকারের সেবা ও সরবরাহ খাতের কোনো আইটেমে ব্যয় বাড়ানো যাবে না। আর মূল বাজেটে ছিল না, এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। এছাড়া চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হবে এমনটি ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এজন্য অপ্রাসঙ্গিক ব্যয় যাতে না হয় সেদিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। সেখানে বলা হয়, অননুমোদিত কোনো স্কমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব কোনো মন্ত্রণালয় করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট স্কিমের জন্য অনুমোদিত মোট ব্যয় সীমার বেশি করা যাবে না। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এছাড়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট এডিপির ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্পকে গুরুত্ব দেয়া, বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প না রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া একই সংস্থার আওতায় বাস্তবায়িত একই উদ্দেশ্যে একাধিক প্রকল্প প্রস্তাব পৃথকভাবে প্রণয়ন না করে একটি প্রকল্পের (গুচ্ছ প্রকল্প) আওতায় প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট, দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাউত্তর পুনর্বাসন এবং চলতি অর্থবছরের শেষ হবে এমন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। আর ধীরগতি প্রকল্প থেকে টাকা কর্তন করে দ্রুত বাস্তবায়নমুখী প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে হবে।