বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

টাকা সাদা করার ‘বিশেষ সুযোগ’ থাকছে না

কালোটাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে থাকছে না। তবে আগের মতো নির্ধারিত করের অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করার পদ্ধতি বহাল থাকছে। অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের আপত্তির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি বাজেটে বিশেষ সুযোগ হিসাবে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ, নগদ অর্থ, স্থায়ী আমানত, জমি-ফ্ল্যাট রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেয়া হয়। ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৩৩ জন টাকা সাদা করেছেন।সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলধারার অর্থনীতিতে কালোটাকা আনতে এক বছরের জন্য এ বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এর সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। কারণ দেশে ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ। এ সুযোগ অব্যাহত রাখা হলে করদাতারা নিয়মিত কর না দিয়ে তা লুকিয়ে রেখে পরবর্তীকালে কম হারে কর দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এ পদ্ধতি চালু রাখলে সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ বিশেষ বিধান বাতিল করে আগের সব পদ্ধতি বহাল রাখা হচ্ছে।

এ পদ্ধতি ছাড়াও বর্তমানে আরও ৩ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ (কালোটাকা সাদা) করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে।

এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়। এসব ক্ষেত্রে এনবিআর অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করবে না। কালোটাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়।

মূলত কালোটাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে এ সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ এর বিরোধিতা করে আসছে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ে এ থেকে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। পরে এ সুবিধা বহাল থাকায় প্রতি বছরই কালোটাকা সাদা করার পরিমাণ বাড়তে থাকে।

১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়, সরকার আয়কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার আয়কর পায় ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা।

এরপর ধারাবাহিকভাবে কালোটাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত এক লাফে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয়, আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এই বছরগুলোতে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, কালোটাকা সাদা করার কোনো আইনি বিধান রাখার দরকার নেই। বাস্তবিক অর্থে এ সুযোগ দিয়ে সরকার তেমন রাজস্ব পায়নি এবং কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করেনি। আর নৈতিক দিক থেকে তো এ সুযোগ রাখাই উচিত নয়। কারণ এ সুযোগ দেয়া মানে সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের অসম্মান এবং নিরুৎসাহিত করা। বরং দীর্ঘদিন এ সুযোগ দেওয়া হলে অর্থনীতিতে আরও কালোটাকার জন্ম হবে। যেমন সরকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছে, এটি বাড়ালে অনেক সৎ ও নিয়মিত করদাতা হয়তো চিন্তা করতে পারে, নিয়মিত কর দিলে ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়, আর দুই বছর পর দিলে সেই টাকার ওপরেই ১০ শতাংশ দিতে হবে। করদাতাদের মধ্যে এ রকম ধারণা জন্ম দিলে কর কমপ্লায়েন্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না : দীর্ঘদিন পর চলতি অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোয় আগামী অর্থবছরে এ সীমা বাড়ানো হবে না। যদিও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।

এনবিআর মনে করছে, আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। এতে করভিত্তি সংকুচিত হবে। তাছাড়া অনেক উন্নত দেশে করমুক্ত আয় সীমা নেই। আর অনেক উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের সমান বা তার চেয়ে কম। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক উপরে।

১০ বছর আগেও প্রায় প্রতি বছরই ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানো হতো। যেমন ২০১১-১২ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরপরের অর্থবছর ২০১২-১৩ তে সেটি ২ লাখ টাকা করা হয়। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেটি আড়াই লাখ টাকা করা হয়। ৫ বছর পর ২০২০-২১ বছরের বাজেটে সেটি বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়।