গত বুধবার ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার দাম ছিল ২৩০ দশমিক ৯ রুপি। বৃহস্পতিবার সেই দাম হয় ২৫৫ দশমিক ৪ রুপি। অর্থাৎ এক দিনে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার আনুষ্ঠানিক দাম প্রায় ২৩ রুপির বেশি কমেছে। আর খোলাবাজারে তা ৭ শতাংশ বা ১৯ টাকা কমে ২৬২ রুপিতে পৌঁছায়। সিএনএন জানায়, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো গত বুধবার পাকিস্তানের খোলাবাজারে মুদ্রার বিনিময় হারের সীমা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পরদিনই ডলারের বিপরীতে রুপির এমন দরপতন হয়েছে। পাকিস্তানি মুদ্রার রেকর্ড দরপতন, প্রতি ডলার এখন ২৫৫ রুপি ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মান রেকর্ড পরিমাণে কমেছে। গত বৃহস্পতিবার তা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমার পর প্রতি ডলারের দাম ২৫৫ রুপিতে দাঁড়িয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এই দরপতন গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
পাকিস্তানি ব্রোকারেজ হাউস জেএস গ্লোবালের মতে, মুদ্রার এত দরপতন ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম ঘটেছে। মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো বলেছে, তারা দেশের স্বার্থেই খোলাবাজারে বিনিময় হারের সীমাটি তুলে নিয়েছেন। কারণ, এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কৃত্রিম বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
ডলারের সংকট থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে পারছে না পাকিস্তান। আর্থিক পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত বছর বন্যার পর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য আরও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল আইএমএফ। তবে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হওয়ায় গত নভেম্বরে সেই অর্থ বিতরণ স্থগিত করে সংস্থাটি।
সম্প্রতি আবার পাকিস্তানে অর্থ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য চলতি মাসের শেষে দেশটিতে একটি প্রতিনিধিদলও পাঠাবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা। তবে একই সঙ্গে মুদ্রার লেনদেনে বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে আইএমএফ। আইএমএফের এমন বিবৃতির এক দিন আগেই পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো দেশটির মুদ্রার বিনিময় হারের সীমা তুলে নেয়। মুদ্রা বিনিময় কোম্পানি সমিতির সভাপতি মালিক বোস্তান বলেছেন, মুদ্রা বিনিময়ে কালোবাজারি মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আন্তব্যাংক বিনিময় হার বাড়াতে অনুরোধ করেছি।
এদিকে পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জে অবশ্য রুপির দরপতনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেএসই ১০০ সূচক আড়াই শতাংশ বেড়ে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের শেয়ারবাজারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরিফ হাবিব লিমিটেডের গবেষণা প্রধান তাহির আব্বাস বলেন, রুপির অবমূল্যায়ন হলেও এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পথনকশা ও আইএমএফের অর্থায়ন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে কিছু অনিশ্চয়তা দূর করছে। এই কারণে শেয়ারবাজারও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। তবে রুপির মান আকস্মিকভাবে কমে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছে ব্যাংকগুলো। দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, আগে যেসব ব্যাংক ২৩০ টাকা দরে ডলার ধার নিয়েছিল, তাদের এখন ২৫০ রুপি দরে সেই ধার পরিশোধ করতে হচ্ছে।