বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের প্রতিশোধ

চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্র এখন নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে, এখন যা মূলত প্রযুক্তিযুদ্ধের রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে পশ্চিমা চিপ কোম্পানি চীনের কাছে সেমিকন্ডাক্টর ও তা তৈরির সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে না পারে। চীনও হাত গুটিয়ে বসে নেই। চলতি মাসের শুরুতে চীন চিপ ও উন্নত প্রযুক্তি নির্মাণে প্রয়োজনীয় দুটি ধাতু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেছেন, চীন প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করেছে এবং এটি কেবল শুরু। ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সি ফেং বলেছেন, প্রযুক্তিযুদ্ধে চীন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। 

দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগেও চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নানা ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে এবার বিষয়টি বেশ গুরুতর বলে মনে হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পশ্চিমা এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ‘আন্তর্জাতিক আইনি লড়াই’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিণামে চীনে এখন বিভিন্ন ধরনের আইন করার হিড়িক পড়ে গেছে।

সম্প্রতি এ ধরনের বেশ কিছু আইন করা হয়েছে চীনে। ২০২০ সালে তারা ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের’ এক তালিকা করেছে; এই আইনে কোনো কোম্পানি চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এরপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন করে দেশটি রপ্তানি-লাইসেন্স জমানার ভিত্তি স্থাপন করেছে। ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞাবিরোধী আইন করা হয়েছে। যারা অন্যান্য দেশের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সহায়তা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ তৈরি করা হয়েছে এই আইনে।

চলতি বছর চীন পররাষ্ট্র সম্পর্ক নামে আরেকটি আইন করেছে। এই আইনে চীন যেসব জাতীয় নিরাপত্তাজনিত ও অর্থনৈতিক হুমকির মুখে আছে, তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসের ১ তারিখে এই আইন কার্যকর হয়েছে। সেদিন গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধে আরেকটি আইন কার্যকর হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে চীনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর আওতা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া চীন তথ্য-উপাত্ত ও সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন আরও কঠোর করেছে।

বেইজিং এসব আইন প্রয়োগও শুরু করেছে। নিছক প্রদর্শনের জন্য যে এসব করা হয়নি, চীনের কর্তৃপক্ষ তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন অস্ত্র কোম্পানি লকহিড মার্টিন ও রেথিয়নের একটি ইউনিটকে অনির্ভরযাগ্য কোম্পানির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। কারণ, চীনে অস্ত্র ব্যবসার অনুমতি না থাকলেও তারা তাইওয়ানে অস্ত্র পাঠিয়েছে। কোম্পানিটি চীনে নতুন করে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বৃদ্ধি করতে পারবে না।

এরপর গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ কোম্পানি মাইক্রনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে চীনের সাইবার খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাইবার নিরাপত্তাজনিত নতুন দুটি আইনের আলোকে এই তদন্ত করা হচ্ছে। মাইক্রন নিরাপত্তা পর্যালোচনা পরীক্ষায় উতরাতে ব্যর্থ হওয়ায় চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে মাইক্রনের চিপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

আবার এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন বিপদেও পড়তে পারে। গ্লোবাল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশন অব চায়নার পিটার আর্কেল বলেন, চীন যেসব বিরল ধাতু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেগুলো দিয়ে তৈরি অনেক পূর্ণাঙ্গ পণ্য চীন নিজেও আমদানি করে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ ছাড়া সরাসরি এভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ভাবতে পারে, চীনের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বড় বড় পশ্চিমা কোম্পানিকে অনির্ভরযোগ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে চীনের তরুণেরা বিপদে পড়তে পারেন। কারণ, এসব অনেক কোম্পানি চীনে বড় পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এরা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়লে চীনে তরুণদের বেকারত্ব বাড়তে পারে। সম্ভবত সে কারণেই রেথিয়নের সব ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেবল এই কোম্পানির প্রতিরক্ষা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইকোনমিস্টের খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত চীনের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে। এরা তুলনামূলকভাবে বাস্তবসম্মত অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ভয়, এগুলোর চেয়েও কঠোর এজেন্সি পরবর্তীকালে না আবার এসব আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। প্রযুক্তিযুদ্ধ আরও তীব্র হলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বাধীন চায়না ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিশন এসব আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামনে চলে আসতে পারে। এর পরিণতি কী হবে, তা চিন্তা করাও কঠিন। সেটা আবার কেবল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি নির্বাহীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, আরও অনেক দূর ছড়িয়ে পড়বে।