প্রতিশ্রুতি মতো চলতি বছরের শেষে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা পাকিস্তানে। সে জন্য কয়েক মাস আগেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নতুন এক তদারকি সরকারের হাতে দেশ শাসনের ভার তুলে দিয়েছিলেন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। অর্থনৈতিক ভাবে ধুঁকতে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের সেই তদারকি সরকারকে নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই সতর্ক করল বিশ্বব্যাঙ্ক।
গত কাল এক প্রথম সারির পাক দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রধান নাজি বানহাসাইনের কিছু বক্তব্য। সেখানেই তদারকি সরকারকে সতর্ক করেছেন নাজি। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংগঠন বা মিত্র দেশগুলি বাইরে থেকে এই চরম আর্থিক সঙ্কট থেকে দেশকে উদ্ধারের পরামর্শ দিতে পারে মাত্র। কিন্তু দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে আসল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে পাক সরকারকেই। নাজির আরও দাবি, এই ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত মূলত রাজনীতিক, সেনা আধিকারিক এবং শিল্পপতিরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। এখন যে চরম আর্থিক সঙ্কটের দোরগোড়ায় পাকিস্তান দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে দিক দিয়ে বিচার করতে হলে খুব ভেবেচিন্তে তদারকি সরকারকে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাঙ্কের ওই কর্তা।
গত কয়েক মাস ধরেই মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের হার আকাশ ছুঁয়েছে পাকিস্তানে। ডলারের নিরিখে রেকর্ড পতন হয়েছে পাকিস্তানি টাকার দামের। বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার যে হেতু তলানিতে, তাই আমদানির উপরেও বসানো হয়েছে বড়সড় নিষেধাজ্ঞা। পাক দৈনিকটির দাবি, দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছেন। বিদ্যুতের দাম গত কয়েক মাসে বেড়েছে প্রবল। এর পাশাপাশি বেড়েছে শিশুমৃত্যুর হারও। অর্থাৎ দেশের শিশুদের একটা বড় অংশ এখন যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবাও পাচ্ছে না। এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে, চাকরি ছাঁটাই। ওই পাক দৈনিকই তাদের রিপোর্টে দাবি করেছে, গত কয়েক মাসে দেশের নানা প্রান্তে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন কারাখানা মালিকেরা। কোথাও বেড়েছে ছাঁটাইয়ের হার, আবার কোথাও সাধারণ মানুষের বেতন কমিয়ে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে পাক তদারকি প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার-উল-হক কাকরের সঙ্গেবৈঠকে বসেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি কাকরকে পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের বিত্তশালী শ্রেণি এবং শিল্পপতিদের উপরে করের বোঝা বাড়িয়ে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের ভার লাঘব করতে। আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা সরানোর পরামর্শও দেন তিনি। তবে বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের এই সব পরামর্শ পাক সরকার কতটা মেনে চলে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।