ভারতের শেয়ারবাজার এখন খুবই চাঙা। বাজারের অন্যতম প্রধান সূচক সেনসেক্স সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে অস্বাভাবিক বিষয় হলো, একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান আরও পড়ে গেছে। ভারতের বাজারে এই বিপরীতমুখী ঘটনা দেখা গেছে গতকাল সোমবার। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, সেদিন একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৮৩ দশমিক ৩৯-এ নেমে যাওয়ার পাশাপাশি শেয়ার সূচক সেনসেক্স এই প্রথম ৭০ হাজারে উঠেছে।
মূলত দুটি কারণে এ বিষয়টি ঘটেছে। প্রথমত, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির হার কমিয়ে দিয়েছেন, যদিও বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কয়েক মাস ধরে শেয়ার বিক্রি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার প্রায় ৫ শতাংশে উঠেছে, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে একধরনের ভারসাম্য এসেছে।
দ্বিতীয়ত, অন্যান্য মুদ্রার সাপেক্ষে রুপি ডলারের সংযোগ ভেঙে যাওয়ার প্রভাব বাজারে পড়েছে। রুপি নিজের অবস্থান কিছুটা ধরে রাখতে পারলেও উপমহাদেশের অন্যান্য মুদ্রার মান ডলারের সাপেক্ষে আরও কমে গেছে। ভারতের ডিবিএস ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান আশিস বৈদ্য বলেছেন, ঋণ ও ইকুইটি বেড়েছে ঠিকই, তবে এবার দেখা যাচ্ছে যে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের কারণেই শেয়ারবাজারে চাঙাভাব বজায় রয়েছে। বিদেশ থেকে পুঁজির বিপুল প্রবাহ আসেনি।
একটি কারণ হলো, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের মজুত থেকে ডলার বিক্রি করে রুপির মান স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। এতে দুটি উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে; আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় আছে এবং ডলার বিক্রি করে তারল্যের রাশ টেনে ধরা গেছে। অর্থাৎ এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরবিআই চায় না, চাহিদার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাক। আগামী কয়েক বছরে রুপির মান ডলারের বিপরীতে বাড়বে কি না, সে নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। এক্সিস ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ নীলকান্ত মিশ্র বলছেন, আগামী কয়েক বছরে রুপির মান বাড়বে এমন সম্ভাবনা খুবই কম—অন্তত আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে রুপির মান বাড়বে, এমন আশা করেন না তিনি।