বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

এনবিআরের কর ক্ষতি বছরে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে : সিপিডি

কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর ফলে এক বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয় বলে এক গবেষণায় পাওয়া গেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি। আজ সোমবার বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

১২টি প্রতিষ্ঠান, ১০ জন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, এনবিআরের ২ জন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতামত এবং কর এড়ানো ও কর ফাঁকির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে সিপিডি গবেষণার হিসাবটি তৈরি করেছে। উন্নয়ন সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় এই গবেষণা পরিচালনা করে সিপিডি। অনুষ্ঠানে গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, আমরা অনুমান করছি, কর ফাঁকির একটি অংশ পাচার হয়। কিছু অংশ বিনিয়োগ হয়। আবার কিছু অংশ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের মধ্যে থাকে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোর লেনদেন অর্থনীতির মূলধারায় আনলে কর এড়ানোর পরিমাণ অনেক কমে যাবে। আবার কর ফাঁকি ধরতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আরও সক্ষমতা বাড়ানো উচিত।

অনানুষ্ঠানিক খাতের কর ক্ষতি নিয়ে সিপিডি তাদের গবেষণায় আরও বলেছে, রাজস্ব ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক খাত। এটি ছায়া অর্থনীতি যার প্রকৃত হিসাব করা কঠিন। এসব খাত থেকে এনবিআর কর আদায় করতে পারে না। অনানুষ্ঠানিক খাতের কারণে ২০১০ সালে কর ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরপর প্রতিবছরই এই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ সালে এসে তা ৪ গুণ বেড়ে ৮৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই গবেষণা করার সময় প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি, হিসাববিদ ও সাবেক কর কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর ফলে প্রকৃত অর্থে ঠিক কী পরিমাণ কর ক্ষতি হয়, তা বলতে পারেনি। তবে সবাই স্বীকার করেছেন, কর এড়ানো ও কর ফাঁকির কারণে এনবিআরে রাজস্ব ক্ষতি হয়।

তাঁরা মনে করছেন, কর এড়ানোর ফলে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ক্ষতি হয়। সিপিডি এর একটি হিসাবও দিয়েছে। তাতে বছরে কর এড়ানোর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৬৯ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে কর ফাঁকির ফলে ১৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়। এতে কর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে ৪১ হাজার ৮০০ কোটি থেকে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

গবেষণায় কর ক্ষতি হওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো দুর্নীতি, জনবলের অভাব, কম ডিজিটালাইজেশন ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় কম লেনদেন।
সিপিডির গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাতে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে ওপরে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে কর-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশের কম। জিডিপির অনুপাতে করের পরিমাণ ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হলে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে হবে। বাংলাদেশে কর এড়ানো ও কর ফাঁকির কারণে যে পরিমাণ কর ক্ষতি হয়, তা আদায় করা সম্ভব হলে কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে পৌঁছানো যেত। সিপিডি আরও বলেছে, জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ রিটার্ন জমা দিয়ে আয়কর পরিশোধ করেন।