বাংলাদেশ থেকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ শত শত কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন ইমোসহ ডিজিটাল মাধ্যমগুলো। কিন্তু এ বাবদ বাংলাদেশ সরকার কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স পাচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কর প্রাপ্তির ইস্যুতে সম্প্রতি হাইকোর্টের এক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর বলছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়ে কার্যালয় স্থাপন ও লেনদেনকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চাই। একইসঙ্গে এ খাতে রাজস্ব প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করতে গত পাঁচ বছরে কী পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে গেছে, তা-ও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীনের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে এনবিআরের কর ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল কর ফাঁকির অভিযোগে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরসহ ছয় আইনজীবী।
রিটকারী আইনজীবীরা জানান, রিটে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে। রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু এবং ইউটিউবকে কর্তৃপক্ষ বিবাদী করা হয়।
ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির জানান, ২০০৭ সাল থেকে গুগল, ফেসবুক, আমাজন, ইয়াহু এবং ইউটিউবের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম বাংলাদেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণের অর্থ উপার্জন করলেও তাদের সেই আয়ের বিপরীতে কোনো কর দেয়া হচ্ছে না।
এসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণের অর্থ উপার্জন করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কর দেয় কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, প্রযুক্তির যুগে গুগল, ফেসবুক এখন প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখতে আগ্রহী। দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এ সুযোগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এ দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো।
কিন্তু সরকারকে এক টাকাও রাজস্ব দিচ্ছে না তারা। ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতি বছর কত টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ বিদেশে পাচার হচ্ছে তার সঠিক কোনো হিসাব সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।
কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের অর্থ পরিশোধ করছে ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য অনলাইন প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এর আগে আমরা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম।
নোটিশের জবাব না পাওয়ায় আমরা রিট করেছি। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, আমাজান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবের বিজ্ঞাপন থেকে অবিলম্বে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
১২ এপ্রিল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায়ের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তার কারণ দর্শাতে রুল জারি করেন আদালত।
অর্থ সচিব, আইন সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, বিটিআরসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন জানান, ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট খাত থেকে অর্থ উপার্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অবিলম্বে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন আদালত।
রুল জারির পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই কমিটি ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট খাত থেকে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো কত টাকা নিয়েছে এবং নিচ্ছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। হাইকোর্টের এই নির্দেশনার পরই টনক নড়ে এনবিআরের।
নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত একটি কমিটিও গঠন করেছে। কমিটি প্রাথমিক বৈঠকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন নিয়ে কার্যালয় স্থাপন করতে হবে। তাদের লেনদেনের পরিমাণ কত সেটাও জানতে চায় এনবিআর। এসব জানতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতিমধ্যেই চিঠি দেয়া হয়েছে।