চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলামে গতি এসেছে। বেড়েছে নিলামের সংখ্যা ও রাজস্ব আদায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে পণ্য নিলাম থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৮ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১১টি। ২০১৮ সালে ২১টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়, যা আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমসের নিলাম ঘিরে সক্রিয় রয়েছে বেশ কটি সিন্ডিকেট। দর নিয়ে এসব সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে যথাসময়ে অনেক নিলামই সম্পন্ন করা যায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমাতে কাস্টমসের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কারণে নিলামের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়। অবশ্য এর পরও নিলামের গতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তাদের মতে, নিলামের সংখ্যা বাড়লেও বন্দরে যে পরিমাণ নিলামযোগ্য পণ্য পড়ে রয়েছে তার তুলনায় এই নিলাম যথেষ্ট নয়। বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে এখনও নিলামযোগ্য বিপুল পরিমাণ পণ্য রয়েছে। এই গতিতে নিলাম হলে নিলামযোগ্য পণ্যের জট কমাতে আরও অনেক বছর লেগে যাবে।
এদিকে নিলামযোগ্য পণ্য বছরের পর বছর পড়ে থাকায় বন্দরে নতুন কনটেইনার রাখতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কখনও কখনও দেখা দিচ্ছে কনটেইনার জট। এ অবস্থায় কাস্টমসের নিলামের গতি আরও জোরদার করার দাবি ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে না নিলে তা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে কাস্টমস সেই পণ্য নিলামে তোলে। বাজারদর পড়ে গেলে লোকসানের আশঙ্কায় কোনো কোনো আমদানিকারক পণ্য ছাড়িয়ে নেন না। এ ছাড়া নিয়ম না মেনে আনা পণ্যও আইনি জটিলতায় ছাড় করাতে পারেন না অনেকে। এগুলো শেষ পর্যন্ত নিলামযোগ্য বলে ঘোষিত হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম) তপন চন্দ্র দে বলেন, নিলামের গতি বাড়াতে কাস্টমস কমিশনার একেএম নুরুজ্জামান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশমতো আমরা নিলামের সংখ্যা ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৭ সালে যেখানে নিলাম হয়েছিল ১১টি; সেখানে ২০১৮ সালে ২১টি নিলাম হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম ছয় মাসে নিলাম বাবদ ৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত পুরো অর্থবছরের প্রায় কাছাকাছি। নিলাম হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপ, কার ও ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল। শিগগিরই আরও বেশকটি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
তবে বন্দরের ওপর পণ্যের চাপ কমাতে নিলাম প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ।
তিনি বলেন, বন্দরে আসা পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে খালাস নেয়া না হলে নিলামে তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের তেমন কিছুই করার থাকে না। কারণ বন্দরের পক্ষ থেকে নিলামযোগ্য পণ্যের তালিকা কাস্টমসের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরবর্তী সব প্রক্রিয়া করে থাকে কাস্টমস। কিন্তু আইনগত জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও লোকবল সংকটের কারণে কাস্টমস সহজেই নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে না। নিলামযোগ্য পণ্য বন্দরের স্থান দখল করে থাকে। এ কারণে অনেক সময় বন্দরের ভেতরে কনটেইনার জট দেখা দেয়। আমরা চাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলাম আরও জোরদার করুক। এতে বন্দরে বাড়তি পণ্যের চাপ কমবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে নিলামযোগ্য প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার রয়েছে। এসব কনটেইনারের নিলাম হয়ে গেলে ওই স্থানে নতুন আরও সমপরিমাণ কনটেইনার রাখা যাবে। এতে বাড়বে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। বাড়বে বন্দরের আয়।