TAXNEWSBD
বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৯ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার (বিআরটিডব্লিউ) নিবন্ধন বা লাইসেন্সের আওতায় না নিয়ে আসায় বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সেই সঙ্গে এ খাতের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশের সড়কগুলোতে প্রায় ১০ লাখের বেশি এ যানবাহন চলাচল করলেও সেগুলোতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে নিবন্ধন বা লাইসেন্স অধীনের না নিয়ে আসায় এ খাতে ১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কর্মসংস্থান তৈরি, ভ্রমণ ব্যয় কমানো এবং বায়ুদূষণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষম এসব থ্রি-হুইলার। এজন্য সরকারের উচিত একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন : ব্যাটারি রান থ্রি হুইলারের ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। বুধবার বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এবং জেট্রো-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রসপেক্টস অ্যান্ড পলিসিস ফর ইলেকট্রিকাল ভেহিক্যালস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক সংলাপে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বৈধতার আগে থ্রি হুইলার যানবাহন পরিচালনা করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তুতের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে এসব বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য চার্জিং অবকাঠামো উন্নত করার ক্ষেত্রেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

টিপু মুনশি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীব্যাপী একটি বড় হুমকি। গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া কমানো, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন বিবেচনায় এ মুহূর্তে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারের প্রয়োজনীয়তা কথা আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কি ধরনের নীতিমালা প্রয়োজন সেটি জানতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া যেহেতু বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে তাই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে পারে। এ ধরনের যানবাহনের জ্বালানির জন্য আলাদা চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানত গ্রামীণ এবং অর্ধ গ্রামীণ এলাকাগুলোতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বিআরটিডব্লিউ। এ গাড়িগুলো জনগণের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য, সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক তাই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ৫টি জেলায় ৫২ হাজার বিআরটিডব্লিউ ৫৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এতে ভ্রমণ ব্যয় রিকশার তুলনায় এক-চতুর্থাংশ এবং সিএনজির অর্ধেক। তাছাড়া রিকশা ও সিএনজির তুলনায় বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। এ গাড়িগুলো ব্যবহারের ফলে চারটি বড় শহরে বায়ুদূষণ কমানোর মাধ্যমে বাৎসরিক ২০০-৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সঞ্চয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোয়াসুই সুমি। তিনি টেকসই শহর ও জাতি গোষ্ঠীর জন্য এসডিজি গোল ১১-এর ওপর জোর দেন। এক্ষেত্রে টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা অতি জরুরি। ব্যাটারি রান থ্রি হুইলারস (বিআরটিডব্লিউ) একটি অপরিহার্য বিকল্প হতে পারে যা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশসহ, ভারত, ভিয়েতনাম এবং চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে একটি খুব কার্যকর পরিবহন হিসেবে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে টেরা মোটর বাংলাদেশের জন্য একটি সফল উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে।

জেট্রো ঢাকা অফিসের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ দাইসুকি আড়াই বলেন, এ খাতে আরও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি প্রয়োজন।

বিল্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বিদ্যুৎচালিত যানবাহন পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং অত্যন্ত সাশ্রয়ী। মাঠপর্যায়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগুলো বিশেষ অবদান রাখছে। কার্যকর কর ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসলে এ যানবাহনগুলো অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সেই সঙ্গে ব্যাটারি, পার্টস ইত্যাদি বিষয়ে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। বিল্ডের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক তাহমিদ জামি জেট্রোর সহায়তায় বাংলাদেশের ব্যাটারি রান থ্রি হুইলার্সের ওপর বিল্ডের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি ভারতের টেরা মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অখির উদা দেশে বিআরটিডব্লিউর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বেসরকারি খাতের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকার সহ-সভাপতি প্রদীপ দাস, স্রেডার সদস্য সিদ্দিকা জোবায়ের, বাংলাদেশ ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মনোয়ার মিসবাহ মইন প্রমুখ।