২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রথম সাত মাসে বেশ পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে সংস্থাটি ৩৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় মোট লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছিল এনবিআর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য নির্ধারিত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫২১ কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এনবিআরকে ২ লাখ ৮০ হাজার ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এপ্রিলের প্রথম দিকে এনবিআর সংশোধিত এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি সেলফোন অপারেটর, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সিমেন্ট ও সিগারেট কোম্পানিসহ বড় করপোরেটদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আসেনি। নির্বাচনের কারণে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে আমদানি-রফতানিতে কিছুটা ধীরগতিও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের ভাবনা থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এমতাবস্থায় এনবিআরভুক্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।
এনবিআর বলছে, সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়েই চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের জন্য ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শুরু থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকলেও অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। এ সময়ে ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এভাবে প্রথম সাত মাসে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থাকায় পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে উন্নয়ন প্রকল্প অব্যাহত রাখতে এনবিআরের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার পরিবর্তে ২ লাখ ৮০ হাজার ২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট খাতে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার স্থলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২০১ কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতে থাকা আয়কর খাতে ১ লাখ ২ হাজার ২০১ কোটি টাকার স্থলে ৯৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা আমদানি-রফতানি শুল্ক খাতে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যা অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৮৪ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, অর্থবছরের শুরুতে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও অর্থনীতির বাস্তবতা বিবেচনায় প্রতি বছরই তা সংশোধিত হয়। চলতি অর্থবছরও লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ বছর জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যবসার গতি কিছুটা স্থির থাকায় রাজস্ব আহরণ প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে আমরা আশাবাদী।
এর আগে গত অর্থবছরেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে এনবিআর। সেবার ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি
টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এনবিআরের জন্য। পরবর্তী সময়ে তা ২৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে বছর শেষে ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয় এনবিআর। বিগত অর্থবছর শেষে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।