TAXNEWSBD
আস্থাহীনতা ও আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি
বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০৪ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

দুর্বল কম্পানি ও লভ্যাংশে অনাস্থা এবং আমানত ও সঞ্চয়পত্রে চড়া হারের সুদের কারণে পুঁজিবাজারবিমুখ হয়ে শেয়ার বিক্রি করছে বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার লেনদেনকারী ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী এসব কথা তুলে ধরে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকাররা মিলে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে পুঁজিবাজারমুখী করা আহ্বান জানান। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংক চলমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে। বাজারে দরপতন নিয়ে বিভিন্ন বিষয় আলোচনার পর সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন শাকিল রিজভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ।

শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকে সুদের হার চড়া, সঞ্চয়পত্রেও ভালো মুনাফা দিচ্ছে। বিকল্প বিনিয়োগ হিসেবে অনেকে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন তুলছে। বিগত সময়ে ভালো কম্পানিও পুঁজিবাজারে আসেনি। আবার যারা এসেছে তাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়, লভ্যাংশও ভালো দেয়নি। যার ফলে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, বিমুখ হয়েছে বিনিয়োগকারী। কিন্তু বিনিয়োগকারী ছাড়া পুঁজিবাজারে গতি আসবে না, আবার বিনিয়োগকারীকে ঠকিয়েও সংশ্লিষ্ট কেউ লাভবান হতে পারবে না। এটা মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগকারীকে জিতিয়েই সবাইকে লাভবান হতে হবে।

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনার পর নিম্নমুখী বাজার নিয়ে আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণে একটি কমিটি গঠনের বিষয়েও সম্মত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া ডিএসইর স্ক্রিপ নিটিং ও মহানগরে একাধিক ট্রেডিং ব্রাঞ্চ স্থাপন এবং মূলধনের জোগান বৃদ্ধির মাধ্যমে তারল্য সংকট সমাধানে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে এক্সপোজারের বাইরে বন্ড ইস্যুর বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচিত বিষয় নিয়ে কমিশনে চিঠি পাঠাবে ডিবিএ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককেও সে বিষয়ে অবহিত করবে তারা।

শাকিল রিজভী বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দুই কিলোমিটারের মধ্যেই ব্রাঞ্চ স্থাপনের বিধান রয়েছে। কিন্তু নিকুঞ্জে ডিএসই চলে গেলে মহানগরে যেন একাধিক ব্রাঞ্চ স্থাপন করা যায় সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হবে। মানসম্মত আইপিও আনতে হবে, যেন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আস্থা বাড়াতে পুঁজিবাজারে ভালো কম্পানি আনতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। ভালো কম্পানি আনতে ডিএসই বড় দায়িত্ব রয়েছে। তবে প্রয়োজনে ব্রোকাররাও সহায়তা করবে। এ জন্য আইপিও আবেদনের একটি প্রসপেক্টাস ডিবিএকে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

পুঁজিবাজারে এমন উত্থান-পতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় বিক্রি বেড়েছে। শেয়ার বিক্রি করতে প্যানিক ছড়িয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই একজন বিক্রি করলে অন্যজন দেখে বিক্রি করছে। বাজার কখনো কৃত্রিম হয় না, ক্রেতা-বিক্রেতার মিথস্ক্রিয়ায় বাজার। কোনো বিষয়ে আগ্রহ বেশি হলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়, আবার বিক্রি বাড়লে কমে যায়। চলমান পরিস্থিতিতে প্যানিক সেল বেশি হয়েছে।

সূচকের উত্থান-পতন বা কারসাজির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে ফুলিয়ে বা উঠিয়ে রাখা যায় না; যেটি হয়তো এক বা দুই ঘণ্টার জন্য হতে পারে বা দুই দিনের জন্য হতে পারে কিন্তু স্বাভাবিক বাজারে এটি সম্ভব নয়। বিনিয়োগকারী না থাকলে বাজার অর্থবহ হবে না। এখনই সময়, সবাইকে সাবধান হতে হবে। বিনিয়োগকারীকে জিতিয়েই জিততে হবে।

বিএমবিএ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ফাদার প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ নিয়েই সেটা এক্সপোজারের মধ্যে পড়ে যায়। তারল্য সংকটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। কাজেই তারল্য সংকট মেটাতে এক্সপোজারের বাইরে বন্ড অনুমোদনের দাবি জানাচ্ছি। এখানে প্রাতিষ্ঠানিকে সক্ষমতা বাড়লে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে।