TAXNEWSBD
উন্নয়নের চাহিদা পূরণে আসছে আরও বড় বাজেট
সোমবার, ০৬ মে ২০১৯ ১২:৫৮ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাড়তি উন্নয়নের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য আরেকটি বড় বাজেট করতে যাচ্ছে সরকার। বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের ওপর ভর করে এবারের বাজেট বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ১৩ শতাংশের কিছু বেশি হবে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গত বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রাক্কলন করা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করছে সরকার। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মেগা প্রকল্পসহ সারাদেশে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হচ্ছে। জানা যায়, নতুন বাজেটে এডিপির আকার হতে পারে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপি এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, যা এরই মধ্যে কাটছাঁট করে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি হবে তার প্রথম বাজেট। উল্লেখ্য, জাতীয় কো-অর্ডিনেশন ও সম্পদ কমিটি হচ্ছে আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সর্বোচ্চ ফোরাম। অর্থমন্ত্রী উল্লিখিত দুটি কমিটির সভাপতি। বৈঠকে বাজেটের পাশাপাশি অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। জানা যায়, বৈঠকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমেদন করা হয়। সংশোধিত বাজেটের আকার চার লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা মূল বাজেট অপেক্ষা ২০ হাজার কোটি টাকা কম। বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী। তবে বিকেলে ক্রয় কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া আগামী বাজেট বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। তবে দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রাক্কলন নিয়ে যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে সরকার, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সিপিডির চেয়ে সরকার বড়। তাদের (সিপিডি) কাছে কী তথ্য-প্রমাণ আছে, তা তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের রাজস্ব আহরণ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। চলতি বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর থেকে বলা হয়, অর্থবছর শেষে এবার আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে।

জানা যায়, আগামী বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে তিন লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বলেছে, প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। এর কারণ তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে কর অব্যাহতি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এই সুবিধা বাতিল না করলে কাঙ্ক্ষিত আয় হবে না। তা ছাড়া অর্থনীতিতে করযোগ্য আয় সীমিত। এ অবস্থায় করের নেট বাড়ানো সম্ভব নয়।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী অবস্থান থাকার পরও এত কম রাজস্ব আয় গ্রহণযোগ্য নয়। রাজস্ব আয় বাড়াতেই হবে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর রাজস্ব আয় বাড়বে। কারণ, জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি চালু করা হবে। ১০ হাজার মেশিন কেনা হবে। পর্যায়ক্রমে আরও কেনা হবে। এসব পদক্ষেপের ফলে রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫২ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে ধরা হয় ৪১ হাজার কোটি টাকা।