এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, বাজেটের আকার ও লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। তবে নতুনভাবে ভ্যাট-কর আরোপ করা হবে না; আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকছে। দেশি শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন ২০১২ আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে। আইনটির অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী সংশোধন করা হয়েছে। বাজেটের আকার বাড়ছে। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও আগামীতে নতুনভাবে ভ্যাট-কর আরোপ হবে না; বরং আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বেশি করদাতা আছে এমন উপজেলায় একাধিক রাজস্ব দপ্তর স্থাপন করা হবে। আগামী বাজেটে জরিমানাসহ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার পরিকল্পনা আছে। অর্থপাচার রোধে কঠোর নজরদারি থাকবে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। করের আওতার বাইরে থাকা সম্পদশালীদের বাড়ির দরজায় হাজির হতে কৌশল রাখা হবে। আমি আশা করছি, কেউ এসে বলবে না, বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে তার ব্যবসায়ের খরচ বেড়েছে। তার পরও বাজেট পেশের কোনো পদক্ষেপে কেউ আপত্তি করলে তা সংশোধন করা হবে। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট সামনে রেখে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।
আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে শুনেছি। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরের কৌশল কী?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :একসময় এ দেশের উন্নয়ন মানে ছিল শহরকেন্দ্রিক কিছু পদক্ষেপ। কিন্তু বর্তমান সরকার শহর ও গ্রামের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করে না। সুষম উন্নয়নে জোর দিয়েছে। সরকার সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে। নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এতে বাজেটের আকার বাড়ছে। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ছে। আগামীতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও ভ্যাট-কর বাড়ানো হবে না; বরং রাজস্বের আওতা বাড়িয়ে আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
অতীতে অনেকবারই বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে এনবিআর জানিয়েছে, ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। আগামী অর্থবছরেও আইনটি বাস্তবায়নের কথা বলছেন। এবারের প্রস্তুতি কি অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভিন্ন?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের আইনটি বাস্তবায়নে এনবিআরের প্রস্তুতি খানিকটা ভিন্ন। চলতি বছরের শুরু থেকে এনবিআর ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নে বাধা কী, তা প্রথমে চিহ্নিত করেছে। পরবর্তী সময়ে তার সমাধানে কাজ করেছে। এত দিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআর কিছু বিষয়ে একমতে পৌঁছাতে পারছিল না। এবার মাননীয় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এনবিআর ও ব্যবসায়ীরা খোলা মন নিয়ে আলোচনা করেছে। আইনটির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। এবারের রাজস্ব বাজেট হবে সহজ ভাষার বাজেট। সেখানে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ থাকবে। এনবিআর বিশ্বাস করে, রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের সহযোগী হলো ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়েই এনবিআর এগিয়ে যেতে চায়।
ভ্যাট আইন ২০১২-তে কিছু সংশোধন করা হয়েছে বলে শুনেছি। বিশেষভাবে ভ্যাটের অভিন্ন হারের পরিবর্তে বহু স্তর হয়েছে। রেয়াত নেওয়ার বিধান থাকছে।
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :হ্যাঁ। আইনটি আর আগের মতো নেই। এনবিআর বিশ্বাস করে, আইনটির কিছু ধারা সংশোধন করা হলে যদি ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারে, তাহলে ব্যবসায়ীরা রাজস্ব প্রদানেও উৎসাহী হবে। আইনটিতে আগে অভিন্ন ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছিল। এখন ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে তা পরিবর্তন করে বহু স্তর করা হয়েছে। ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশ থাকলেও সেখানে রেয়াত নেওয়ার সুযোগ পাবে ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ১০, ৭.৫, ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। শূন্য হারে ভ্যাট প্রদানের বিধানও থাকছে। এতে রপ্তানিকারকরা সুবিধা পাবে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩৬ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা, টার্নওভার করের সীমা তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ ভ্যাট হার নির্ধারণে সম্মত হয়েছে। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে সীমিতভাবে ইএফডিআই প্রদান করা হবে। এর ব্যবহার ভবিষতে বাড়ানো হবে। এ ছাড়া অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা থাকছে।
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও কোনো পণ্যে নতুনভাবে ভ্যাট আরোপ হবে না। বেশি ব্যবহৃত পণ্যে এবং নিত্য পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে অসাধু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিরা কোনো অজুহাতে বাজেটের পরে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তা সরকার কঠোরভাবে নজরদারি করবে।
এ দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। অথচ ইটিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এ সংখ্যা আরো বেশি হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করে। এনবিআর গ্রামের বা উপজেলা পর্যায়ের চেয়ে শহরকেন্দ্রিক কার্যক্রমে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে এ সংখ্যা বাড়ছে না এমন অভিযোগ শোনা যায়।
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : এমন অভিযোগ সঠিক নয়। এনবিআরের কাজের ধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এনবিআর শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও করদাতা চিহ্নিত এবং তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় রাজস্ব দপ্তর স্থাপনের কাজ আগামী অর্থবছরেও চলবে। যেখানে করদাতার সংখ্যা বেশি, সেসব উপজেলায় একাধিক রাজস্ব দপ্তর থাকবে। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করদাতা চিহ্নিত করা হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা আগামী বাজেটে উল্লেখ থাকবে। আশা করছি এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব খাতে সুফল আসবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সম্পূর্ণ বাজেট বাস্তবায়ন করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি।
আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের তিন খাত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কের মধ্যে কোন খাতে লক্ষ্যমাত্রা কেমন ধার্য করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :চলতিবারের মতো আগামী অর্থবছরেও ভ্যাট খাতকে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করার পরিকল্পনা আছে। ভ্যাটের পরিমাণ থেকে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অল্প কিছু কমানো হতে পারে। শুল্ক সবচেয়ে কম নির্ধারণ হতে পারে। এনবিআরের নেওয়া সব সিদ্ধান্ত পরে পরিবর্তন হতেও পারে।
প্রতিবছর বাজেটে সম্পদশালীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর কথা শোনা যায়। কিন্তু রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ঘুরেফিরে একই থাকছে। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব ফাঁকি কমাতে এবং সম্পদশালীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা আছে?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বচ্ছভাবে রাজস্ব আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। রাজস্ব আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে ই-রিটার্ন, ই-পেমেন্ট, ইটিআইএন, স্ক্যানিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেওয়া হবে। এতে সুফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আগামী বাজেটে করের আওতার বাইরে থাকা সম্পদশালী করদাতাদের রাজস্ব জালের আওতায় আনতে তাদের বাড়ির দরজায় হাজির হতে কৌশল রাখা হচ্ছে।
দেশি-বিদেশি প্রতিবেদন ও সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থপাচারের কথা জানা যায়। এ বিষয়ে আগামী অর্থবছরে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শুনছি। বিশেষভাবে বন্ড-দুর্নীতি বন্ধে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেওয়ার কথা কি ভাবছেন?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :আগামী অর্থবছরে জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। দেশে অর্থ বিনিয়োগের এবং আয় করা অর্থ ব্যবহারের সুযোগ থাকলে কেন অর্থপাচার হবে? আগামীতে শিল্প বিকাশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন সুযোগ রাখা হবে। এসব সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে বলে আশা করছি। দেশে অর্থ বিনিয়োগে ও ব্যবহারের সুযোগ থাকলে অর্থপাচারে উৎসাহী হবে না। অর্থপাচার রোধে আইনিব্যবস্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। অর্থপাচার রোধে কাজ করছে সরকারের এমন সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হবে। এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। মিথ্যা ঘোষণায় একটি পণ্যও খালাস না হতে পারে সে জন্য প্রতিটি বন্দরে স্ক্যানিং করে পণ্য ছাড়করণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে কী পণ্য কতটা আনা হচ্ছে, তার সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া সহজ হবে। এতে বন্ড-দুর্নীতিও কমবে। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে নজরদারি বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অর্থপাচার রোধে দেওয়া নির্দেশ কেউ পালনে গাফিলতি করলে তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবসা থাকবে। এর অনেক কিছু বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ না থাকলেও এনবিআরের জন্য পৃথক নির্দেশনা থাকবে।
অনলাইনে ব্যবসা বাড়ছে। এ বিষয়ে এনবিআর আগামী বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :উবার, পাঠাও, ফেসবুকসহ নতুন খাতে কর আদায়ের স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। অনলাইন ব্যবসায়ে তরুণ প্রজন্ম বেশি। এ দেশের তরুণরা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে আগ্রহী। তরুণদের অনেকে এখনো কর প্রদানে সক্ষম না হলেও ইটিআইএন নিয়ে রেখেছে। এর চেয়ে আশার কথা আর কী হতে পারে। তরুণরা প্রযুক্তির সাহায্যে কর দিতে আগ্রহী। এনবিআর প্রযুক্তির সাহায্যে কর প্রদানের পদ্ধতি সহজ করছে। এ বিষয়ে আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে কোন বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? বিনিয়োগ বাড়াতে কী ধরনের ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছেন?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :আগামী অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে দেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বেশি রাজস্ব সুবিধা দেওয়া হবে। দেশি শিল্পের বিকাশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। বেশি চাহিদা আছে এমন কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার চেষ্টা আছে। এ ছাড়া কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানি ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতেও ছাড় দেওয়া হতে পারে। আমি আশা করছি, বাজেট পেশের পর কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলবে না, বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপে তার ব্যবসার খরচ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা করপোরেট করহার কমানোর দাবি করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেক কিছু বিবেচনা করে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। যখন তারা দেখে প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি, তখন তারা পিছিয়ে যায়। আগামী কয়েকটি অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে করপোরেট করহার কমিয়ে একটি পর্যায়ে আনার পরিকল্পনার কথা শুনেছিলাম। আগামীবার করপোরেট করহার কমানোর পরিকল্পনা আছে?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :সব খাতে করপোরেট করহার কমানো হলে রাজস্ব আদায় অনেক কমে যাবে। এ ছাড়া অতীতে ব্যাংকিং খাতে করপোরেট করহার কমানো হলেও খুব বেশি সুফল আসেনি। তবে এনবিআর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
এনবিআর আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনাকালে আপনি অনেকবার বলেছেন, সাধারণ মানুষের স্বস্তিতে পদক্ষেপ নেবেন। এ ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে সাধারণ আয়ের মানুষ স্বস্তি পাবে। এ বিষয়ে এনবিআর কী ভাবছে? ন্যূনতম করের পরিমাণে কি পরিবর্তন করা হবে?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে। অনেকেই এক বছরে কর হিসেবে দুই-পাঁচ হাজার টাকা দিতে সক্ষম। সব ক্ষেত্রে ছাড় দিলে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে কিভাবে? অনেক দেশেই করমুক্ত আয়সীমা বছরের পর বছর একই থাকে। সেসব দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ সীমা বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে কী হয় তার জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বস্তিতে বাড়িওয়ালাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। তাদের ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাজেটের কারণে বাড়বে না। রাস্তায় বের হলেই লক্কড়ঝক্কড় পরিবহন দেখা যায়। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে এসবে ওঠে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ভালো মানের গণপরিবহন ও হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার দাবি আছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানিতে উপযুক্ততা খোঁজা হচ্ছে।
অনেক মামলা আদালতে অনিষ্পত্তি অবস্থায় আছে। এসব মামলা নিষ্পতিতে দীর্ঘসূত্রতা আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব মামলা নিষ্পত্তি হলে এনবিআরের আদায় বহু গুণ বাড়বে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে এনবিআর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না?
মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া :অনেকে বকেয়া আদায় বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখতে কৌশলে মামলা করে থাকে। বকেয়া রাজস্ব আদায়ে এসব মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনে নিষ্পত্তিতে ব্যবসায়ীদের আগামী অর্থবছরেও উৎসাহিত করা হবে।