করখেলাপির দায়ে তিন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে বিশেষ নজরদারি বাড়াতে ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চিঠিতে করখেলাপিদের হিসাবে যে কোন টাকা জমা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে কর ফাঁকির সমপরিমাণ টাকা রাজস্ব বোর্ডে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। দেশের সকল ব্যাংকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে দেশের শুল্ক ও ভ্যাট নিয়ন্ত্রণকারী এই সংস্থাটি। তিন ব্যক্তির মাধ্যমে মোট করখেলাপির পরিমাণ ১ কোটি ৭৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এরূপ ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণেই বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই বাজেট ঘাটতি পূরণে ধার করতে হচ্ছে বিদেশি সংস্থা ও দেশিয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে।
করখেলাপিদের মধ্যে-রাজধানীর উত্তরার অধিবাসী রোকসানা বেগমের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা টাকার পরিমাণ ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩০ টাকা। চিঠিতে রোকসানা বেগমের স্বামীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে আলমগীর কবির। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী অবিলম্বে করখেলাপির ব্যাংক হিসাবে কোন টাকা থেকে থাকলে অথবা কোন টাকা জমা হওয়া মাত্র উল্লেখিত সমপরিমাণ টাকা উপকর কমিশনারের কার্যালয় কর অঞ্চল-৯ বরাবর পে-অর্ডারের মাধ্যমে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের অধিবাসী অপর করখেলাপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তার বিপরীতে ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৮০৩ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। আয়কর অধ্যাদেশের একই ধারা অনুযায়ী ৫১ ব্যাংকের যেকোনো শাখায় কর ফাঁকির সমপরিমাণ টাকা জমা থাকলে সে পরিমাণ টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাজস্ব বোর্ডের উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় কর অঞ্চল-৯ বরাবর প্রেরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী নজরুল ইসলামের পিতার নাম মো. আব্দুল মান্নান।
অপর করখেলাপির নাম সালমান এফ আলম। পিতার নাম কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শামসুল আলম। তিনি উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর অধিবাসী। তার বিরুদ্ধে ৪৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯১ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করেছে এনবিআর। বাংলাদেশে কর্মরত ৫১টি ব্যাংকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা জমা থাকলে যাতে অর্ডারের মাধ্যমে কর অঞ্চল-৯ বরাবর প্রেরণ করা হয়।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশের চার কোটি লোকের কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে। তাঁদের বেশির ভাগই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কর দেন না। আমরা তাঁদের কর জালে আনার উদ্যোগ নিয়েছি।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছি না। দেশে ৪ কোটি নাগরিক মধ্যম আয়ের অন্তর্ভুক্ত। অথচ আয়কর দিচ্ছেন ২০-২২ লাখ জন। এ সংখ্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১ কোটিতে নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। রাজস্ব আহরণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।