আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হচ্ছে। এতে স্বস্তি পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে বিস্তার করা হচ্ছে ভ্যাটের জাল। এ লক্ষ্যে বিভাগীয় শহরের শপিংমল ও দোকানপাটে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানো হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এতে ভ্যাট আদায় বাড়বে। এর বাইরে সিগারেট ও মোবাইল ফোনে নতুন করারোপ করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রণোদনার অংশ হিসেবে আগামী বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ব্যাপক হারে বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৫০ লাখ টাকা রয়েছে। অর্থাৎ বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হয় না।
টার্নওভার ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৮০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে উল্লেখ থাকবে।
ফলে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীর বার্ষিক টার্নওভার ৮০ লাখ টাকার কম হবে তাদেরকে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। ৮০ লাখ টাকার বেশি থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভার হলে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এতে ব্যবসায়ীরা বার্ষিক টার্নওভারের আরও ৩০ লাখ টাকা ভ্যাট অব্যাহতি পাবেন।
নতুন আইনের শুরুতে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ছিল ৩০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সময় সেটি বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়। এ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তখন অনেক ব্যবসায় সংগঠন ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৮০ লাখ টাকার করার জোর দাবি জানিয়েছিল।
আগামী বাজেটে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হলেও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক ভ্যাট নিবন্ধন নেয়ার বিধান করা হচ্ছে। নিবন্ধন কার্যক্রম জোরদারের ঘোষণা থাকবে বাজেটে। অর্থাৎ ব্যবসা করতে হলে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। ফলে ভ্যাটের আওতা বাড়বে। এছাড়া ভ্যাট অব্যাহতির সীমার অপব্যবহার রোধ করা সহজ হবে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর নতুন আইনে ভ্যাট অব্যাহতি এবং টার্নওভার সীমায় বিশাল ছাড় দেয়া হয়। এ সুযোগ নিয়ে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করতে তৎপর হয়। এতে কয়েক হাজার ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান আওতার বাইরে চলে যায়। ফলে ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আগামী বাজেটে সব ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ও ভ্যাট রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। এ জন্য রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে দোকানপাট ও শপিংমলে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। করোনা প্রকোপ কাটলে সর্বত্র ইএফডি মেশিন বসানো হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ২৪ ধরনের ব্যবসায় ইএফডি মেশিন বসানো বাধ্যতামূলক আছে। এগুলো হচ্ছে- আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকান; ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স; মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড; বিজ্ঞাপনী সংস্থা; ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা; কমিউনিটি সেন্টার; মিষ্টান্ন ভাণ্ডার; স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং সোনা-রুপার দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী; আসবাব বিক্রয় কেন্দ্র; কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস; বিউটি পারলার; হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার; কোচিং সেন্টার; সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব; তৈরি পোশাকের দোকান; ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালিসামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র; শপিং সেন্টার ও শপিংমলের সব সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান; ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ; বড় ও মাঝারি ব্যবসা (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান; যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল এবং সিকিউরিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
২৯ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া যাবে : এদিকে জরিমানা-বিলম্ব সুদ ছাড়াই ব্যক্তি ও কোম্পানি পর্যায়ের করদাতারা আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। সোমবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি থাকায় অনেক ব্যক্তিশ্রেণি ও কোম্পানি করদাতা সময়মতো রিটার্ন জমা দিতে পারেনি।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সময়মতো রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা ও বিলম্ব সুদ আদায়ের বিধান রয়েছে। করদাতাদের সুবিধার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এরপর যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে করদাতা রিটার্ন জমা দিতে দুই দফায় ৪ মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে পারেন। সে হিসেবে ৩১ মার্চ ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন জমা সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু এ সময় লকডাউন থাকায় প্রায় দেড় লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দিতে পারেনি। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতাদের অধিকাংশও রিটার্ন জমা দিতে পারেনি।