TAXNEWSBD
কমতে পারে আগাম ও টার্নওভার কর
বুধবার, ১০ জুন ২০২০ ০০:২০ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

করোনাভাইরাসের কারণে জনগণের আয় রোজগার কমেছে। আসন্ন বাজেটে ভ্যাটে ছাড়, হার কমানো, আইনকানুন সহজ, ফাঁকি বন্ধ ও সংস্কার জোরদার করে জনগণকে স্বস্তি দিতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেট আগাম করে পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে মূলধনি যন্ত্রপাতি, অত্যাবশ্যকীয় ও সামরিক সরঞ্জাম, ত্রাণসামগ্রীসহ কিছু পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা আছে। তবে এই কর মাসিক ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ফেরত দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে আগাম করের দুটি স্তর করা হচ্ছে। শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামালের জন্য হবে ৩ শতাংশ। আর যারা বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করবে, তাদের জন্য ৫ শতাংশই বহাল রাখা হচ্ছে। সূত্র মতে, কাঁচামালের কর কমলে শিল্প উৎপাদন খরচ কমবে। ফলে জনগণ সহনীয় দামে পণ্য কিনতে পারবে।

ব্যাংক আমানতের কর কাঠামোতেও কিছুটা পরিবর্তন আসছে। জানা যায়, এখন আমানতের ওপর পাঁচ ধাপে আবগারি শুল্ক্ক কর্তন করা হয়। বছর শেষে একবার স্থিতির ওপর প্রযোজ্য হারে কাটা হয়। সূত্র বলছে, শেষ ধাপে যাদের অ্যাকাউন্টে পাঁচ কোটি টাকার বেশি থাকবে, তাদের ওপর কর হার বাড়ছে। এখন পাঁচ কোটি টাকার বেশি থাকলে বছর শেষে ২৫ হাজার টাকা কর্তন করা হয়। জানা যায়, এ স্তরে বর্তমানের চেয়ে ১৫ শতাংশ আবগারি শুল্ক্ক বাড়ানো হতে পারে। তবে অন্য সব স্তরে অপরিবর্তিত থাকছে।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যাদের বেশি সম্পদ আছে তাদের কর ভার বাড়বে। সাধারণ আমানতকারীদের ওপর কোনো চাপ আসবে না।

করোনায় ছোট ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে তাদের কিছুটা ভ্যাট ছাড় দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত বছরে লেনদেন বা বিক্রয় হলে তারা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দেন। সূত্র জানায়, তাদের জন্য টার্নওভার কর কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে ব্যবসার খরচ কমবে, যা প্রকারান্তরে ভোক্তারা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।

সিগারেট খাতের কর কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। মধ্যম স্তর ও বিড়ির মূল্যস্তর বর্তমানের চেয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ছে। ফলে সিগারেট ও বিড়ির দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

সেবা খাত বিশেষ করে হোটেল-রেস্তোরাঁর ভ্যাট হারে পরিবর্তন আসতে পারে। করোনায় এ খাতের ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ভ্যাট হার বর্তমানের চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে পারে, যা এখন আছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

সূত্র বলছে, এ সবসহ অন্য খাতে কর প্রস্তাব করে আগামী ২০২০-২১ বাজেটে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও করোনার কারণে এ বছর ভ্যাট আদায় তলানিতে পৌঁছেছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ।

সূত্র বলছে, আসন্ন বাজেটে ভ্যাট হার ও আওতা তেমন বাড়ছে না। তবে সংস্কারে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, নতুন আইনে উৎসে কর আদায় ও রেয়াত প্রদানে নানা ধরনের অসঙ্গতি আছে। আসন্ন বাজেটে এসব দূর করা হবে, যাতে ভ্যাট আহরণ ও প্রদান প্রক্রিয়া সহজ হয়। এ লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ থাকছে।

ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক সম্ভাবনাময় খাত আছে। নিবিড় তদারকি করলে ফাঁকি বন্ধ হবে। ফলে আদায় বাড়বে। যেমন খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রচুর ভ্যাট ফাঁকি হয়। এখানে মোট আদায়যোগ্য ভ্যাটের মাত্র ১৫ শতাংশ আসে। হার কমিয়ে সবাইকে আওতায় আনতে পারলে বছরে কমপক্ষে বাড়তি ৫০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব, যা এখন হয় মাত্র দেড় হাজার কোটি টাকা।

উৎসে জোগানদার ও নির্মাণ খাতে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি হয়। এসব খাতে নজরদারি বাড়ালে আদায় আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এনবিআরের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান বলেন, ভ্যাট আহরণের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। প্রয়োজন নিবিড় তদারকি ও আদায় কার্যক্রম জোরদার করা। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।