অসমন্বয়যোগ্য ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি করেছেন সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, অগ্রিম আয়কর অসমন্বয়যোগ্য হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো পুঁজির সংকটে পড়ছে। এতে কারখানা বন্ধ হয়ে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) অসন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের এই দাবি জানায়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর কবির বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রায় প্রতিটি ব্যবসায় স্থবিরতা চলছে। নির্মাণকাজ নেই। চাহিদা না থাকায় সিমেন্ট কারখানাগুলো সক্ষমতার ৩০-৪০ শতাংশের বেশি চালাতে পারছে না। তবে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অন্যান্য নিয়মিত খরচও রয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির জন্য যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা উদ্যোক্তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর দিতে হলে তা অন্যায্য হবে।
অগ্রিম আয়করের বিষয়ে বিসিএমএ বলেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সিমেন্ট খাতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়। এটি অসমন্বয়যোগ্য চূড়ান্ত দায়। তার মানে কোনো কোম্পানি লাভ-লোকসান যাই করুক না কেন, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতেই হবে। পরে উদ্যোক্তারা সরকারি নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে দেন দরবারের করলে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে অগ্রিম আয়কর অসমন্বয়যোগ্য হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর পুঁজি থেকে এটি চলে যাচ্ছে।
অগ্রিম আয়করের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বা টনপ্রতি ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবি করেছে বিসিএমএ। সংগঠনটি বলছে, দেশের সিমেন্ট খাতের প্রয়োজনীয় শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। তারপরও যে পরিমাণ আমদানি শুল্ক আরোপ করা আছে, তা অযৌক্তিক। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে শুল্ক টন প্রতি ৫০০ টাকা আরোপ করা আছে। প্রতি টন ক্লিংকার বর্তমানে ৪২ ডলারে আমদানি হচ্ছে। সেই হিসাবে আমদানি শুল্ক দাঁড়ায় ১৪ শতাংশ। দেশের অন্য কোনো শিল্পে এই পরিমাণ আমদানি শুল্ক আরোপ করা নেই। এটা বড়জোর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি করেছিল বিসিএমএ। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বর্তমানে সচল সিমেন্ট কারখানার সংখ্যা প্রায় ৩৫টি। বার্ষিক সিমেন্টের চাহিদা সাড়ে ৩ কোটি টন হলেও কারখানাগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ কোটি টন। আগামী তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা আরও ১ কোটি ১০ লাখ টন বৃদ্ধি পাবে। খাতটিতে প্রায় ৪২ হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। সিমেন্ট খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, করোনার কারণে সিমেন্ট খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাগুলো ৯০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ ছিল। বর্তমানে ৬০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ। মূলত বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণই উৎপাদন হচ্ছে। কারণ দুই-তিন দিনে যে সিমেন্ট উৎপাদন হয় তার বেশি মজুত রাখার সক্ষমতা নেই।