ই-পেমেন্ট বা অনলাইনে ভ্যাট, টার্ন ওভার কর, সম্পূরক শুল্ক, জরিমানা, সুদ পরিশোধের ব্যবস্থা চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ প্রক্রিয়ায় শুরুতে এইচএসবিসি, প্রাইম ও মিড ল্যান্ড ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকরা পেমেন্ট করতে পারবেন। আর ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল ব্যাংককে এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হবে। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে ভ্যাট, টার্ন ওভার কর, সম্পূরক শুল্ক, জরিমানা, সুদ পরিশোধের ই-পেমেন্ট সেবার উদ্বোধন করেছে এনবিআর। অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এনবিআর জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং পরিপালন খরচ কমিয়ে ইজি অফ ডুইং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে চালু হচ্ছে ই-পেমেন্ট মডিউল। ইতোমধ্যে ই-পেমেন্ট মডিউলটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভ্যাট সংক্রান্ত সকল কর (ভ্যাট, টার্ন ওভার কর, সম্পূরক শুল্ক, জরিমানা, সুদ ইত্যাদি) ই-পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে পরিশোধ করা যাবে।
ই-পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তি প্রদেয় রাজস্ব ঘরে বসে তার ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা করতে পারবেন। করদাতা কর পরিশোধের জন্য তার ব্যাংককে ইনস্ট্রাকশন (নির্দেশনা) পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে নির্ধারিত হিসাব কোডে জমা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তাৎক্ষণিক অটোমেটেড একটি চালান নম্বর জেনারেট করে উক্ত অর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর হিসাবে জমা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত জমার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনে আইভিএএস এ প্রেরণ করবে, যা আইভিএএস রক্ষিত করদাতার হিসাবে সংরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই জমার তথ্য আইবিএএস (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম) সিস্টেমেও পাঠাবে। আইভিএএস থেকে ই-মেইলে করদাতাকে ই-পেমেন্ট কনফার্মেশন মেসেজ পাঠাবে, যা করদাতা মাসিক দাখিলপত্রে (রিটার্নে) ট্রেজারি জমার প্রমাণিক দলিল হিসেবে প্রদর্শন করবে।
ই-পেমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে যে সব সুবিধা পাওয়া যাবে-
>>> ই-পেমেন্ট মডিউল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা পরিপালন খরচ কমাবে এবং ইজি অফ ডুইং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
>>> প্রদেয় রাজস্ব করদাতা ঘরে বা যে কোনো স্থানে বসে তার ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা করতে পারবেন।
>>> নগদ অর্থ বা পে-অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে হবে না।
>>> সহজে কর পরিশোধ করা যাবে।
>>> কর পরিশোধে সময় কম লাগবে।
>>> শত ভাগ নিরাপত্তা বলয়ে কর পরিশোধ করা যাবে।
>>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আইভিএএস থেকে নির্ভুল করের হিসাব পাবে।
>>> নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থাকবে না।
>>> ট্রেজারি চালান যাচাই বিড়ম্বনা দূর হবে।
>>> স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ই-পেমেন্টর উদ্বোধন করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুর ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব ও পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আব্দুল ফাত্তাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসকনীতি) মো. মাসুদ সাদিক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন, এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মাহবুব উর রহমান, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিস্টেম ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান ই-পেমেন্ট সিস্টেমের ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। ই-পেমেন্ট পদ্ধতির ওপর এইচএসবিসি ব্যাংক কর্তৃক নির্মিত একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়।