এ দেশে সংখ্যার দিক থেকে চাকরিজীবীরাই বেশি আয়কর রিটার্ন বা বিবরণী দেন। ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী করদাতা থাকলেও বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা করে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা। দেশে যত কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছে, তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই চাকরিজীবী। মোটামুটি ভালো বেতন পান, এমন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ে কর্মকর্তাদের রিটার্ন দাখিল করতেই হয়। কারণ, কোনো কর্মকর্তা রিটার্ন না দিলে বেতন ভাতার টাকা খরচ হিসেবে দেখাতে পারে না ওই প্রতিষ্ঠান। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান পে রোল ট্যাক্স বা প্রতি মাসে বেতন দেওয়ার সময় উৎসে কর কেটে রাখে। সরকারি কর্মকর্তাদেরও একইভাবে বেতন থেকে আয়কর কেটে রাখে সরকার।
চাকরিজীবীদের বার্ষিক করযোগ্য আয় তিন লাখ টাকা ছাড়ালেই কর দিতে হবে। মোটা দাগে মূল বেতন ২১ হাজার টাকা পেরোলেই চাকরিজীবীদের রিটার্ন দিয়ে কর দিতে হয়। ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়ে ৩৬ লাখ টিআইএনধারী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১০ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮ জন বৈতনিক করদাতা। তাঁরা চাকরি করে উপার্জন করেন। বাকি ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৩২ জন অন্যান্য শ্রেণির করদাতা। তাঁদের মধ্যে আছেন আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার। এর বাইরে এনবিআরে নথিভুক্ত কোম্পানি করদাতা আছে আরও প্রায় ৮০ হাজার।
গত দুই বছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা আরও ৯ লাখ বেড়েছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এই নতুন করদাতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক চাকরিজীবী।
আয়কর হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। এর একটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এর বড় অংশই আদায় হয় উৎসে। এ জন্য তেমন কোনো শ্রম দিতে হয় না এনবিআরকে। বিশেষ করে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হলেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারের কাছে চলে যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হিসাবে আয়কর আদায়ের বড় অংশই এসেছে উৎসে কর বাবদ। এর হার ছিল প্রত্যক্ষ কর বাবদ পাওয়া মোট রাজস্বের ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি এসেছে অগ্রিম আয়কর, ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর আয়কর বিবরণী বা রিটার্নের ভিত্তিতে আয়কর আদায় হয় ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং কোম্পানি ব্যতীত আদায় ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
চাকরিজীবীরা বেশি রিটার্ন দিলেও উৎসে আদায়ের মধ্যে পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আসে ঠিকাদারদের কাছ থেকে। বিল দেওয়ার সময়েই এই কর কেটে রাখা হয়। মোট উৎসে করের মধ্যে এর হার ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এ ছাড়া আমদানিকারকদের কাছ থেকে ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সম্পত্তি হস্তান্তর খাত থেকে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, রপ্তানি বাবদ এসেছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ, বেতন থেকে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ, লভ্যাংশ থেকে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং প্রবাসী আয় খাতে উৎসে কর আদায় হয় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।