আগামীকাল ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও আয়কর পেশাজীবীদের সংগঠনের সময় বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্ন জমার শর্ত শিথিল করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর রিটার্ন জমার শেষ দিন। কিন্তু করোনার কারণে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সংক্রমণের ভয়ে করদাতারা অনেকে ভয়ে সার্কেল অফিসে যেতে চাচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠন রিটার্ন জমার সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রথমত রিটার্ন জমার সময় বাড়ানো। দ্বিতীয়ত দেরিতে রিটার্ন জমার জরিমানা মওকুফ করা। প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিমানা মওকুফের পরিকল্পনা রয়েছে। রোববার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে আয়কর নীতির সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের আবেদনের বিষয়ে রোববার এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্য আয়কর আইনজীবী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময় না বাড়িয়ে জরিমানা মওকুফ করলে তা কারোর জন্যই মঙ্গল হবে না। কারণ সময় বৃদ্ধির আবেদন করতেও করদাতা বা তার প্রতিনিধিকে সার্কেল অফিসে যেতে হবে। যদি সার্কেল অফিসে যেতেই হয়, তবে তো রিটার্নও জমা দেয়া যায়। এ অবস্থায় বিবেচ্য বিষয় হল, করোনার সংক্রমণ রোধ।
ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, সরকার যেখানে করোনার সংক্রমণ কমাতে বদ্ধপরিকর, সেখানে এনবিআর করদাতাদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। পৃথিবীর সব দেশ বিশেষত ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ড রিটার্ন জমার সময় শিথিল করছে। কিন্তু এনবিআর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেটি করছে না।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জরিমানা মওকুফ সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। করদাতারা জরিমানা দিয়ে হলেও দেরিতে রিটার্ন জমা দিতে চায়। কিন্তু সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে করদাতাদের সার্কেল অফিসে যেতে হবে। এছাড়া সময় না বাড়ানো হলে করদাতারা সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবে না। সময় বাড়ানো হলে রিটার্ন জমার পাশাপাশি কর আদায়ও বাড়বে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে অন্য বছরের চেয়ে এ বছরের পরিস্থিতি আলাদা। প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সবাইকে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় মানবিক দিক বিবেচনায় রিটার্ন জমার সময় পিছিয়ে দেয়া উচিত।
দেরিতে রিটার্ন জমায় জরিমানা : ৩০ নভেম্বরের পর রিটার্ন জমা দিলে করদাতাকে তিন ধরনের জরিমানা দিতে হয়। আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় বলা হয়েছে, করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সেজন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অঙ্ক ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে।
একই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুলও গুনতে হবে। এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশের ৭৩ অনুযায়ী ৫০ শতাংশ সরল সুদ এবং ৭৩(এ) ধারা অনুযায়ী, করদাতাকে নির্ধারিত করের ওপরে প্রতিমাসে ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতে হবে। কিন্তু সময়ের আবেদন না করেও রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তবে এজন্য করদাতাকে বিলম্ব সুদের পাশাপাশি আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা দিতে হবে।
১ ডিসেম্বর থেকে এ জরিমানার তারিখ গণনা শুরু হয়। সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা দিতে হবে না, তবে ৭৩ ও ৭৩এ ধারা অনুযায়ী সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ দিতে হবে।
যেভাবে সময় বৃদ্ধি আবেদন করা যায় : পেশাজীবীদের রিটার্নের সঙ্গে বেতন বিবরণী, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও বিনিয়োগের সপক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। বন্ড বা ডিবেঞ্চার থাকলে ফটোকপি, সুদ আয় থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সনদ লাগে। গৃহ সম্পত্তি খাতে আয়ের ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা, ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ি কেনা বা নির্মাণ করা হলে ঋণের সুদ সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট এবং গৃহ-সম্পত্তির বীমা থাকলে প্রিমিয়ামের কপি জমা দিতে হবে।
এর বাইরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থাকলে লেনদেন সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র, সঞ্চয়পত্রের সুদপ্রাপ্তি সার্টিফিকেট ও ব্যাংক সুদ আয় থাকলে তার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
যাদের রিটার্ন জমা দিতে হবে : ১২ সংখ্যার টিআইএন রয়েছে এবং বার্ষিক আয় (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত) ৩ লাখ টাকার বেশি হয়েছে-এমন প্রত্যেক নাগরিকের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক।
এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, গাড়ির মালিক ও ট্রেড লাইসেন্সধারীদের রিটার্ন জমা দিতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে বা টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলেও রিটার্ন দিতে হবে। তবে তিন ধরনের ব্যক্তি টিআইএন থাকলেও রিটার্ন জমা দিতে হবে না। তারা হলেন- নির্দিষ্ট আয়হীন বিদেশি ব্যক্তি, জমি বিক্রির উদ্দেশ্য টিআইএন নেয়া ব্যক্তি এবং ক্রেডিট কার্ডের জন্য টিআইএন নেয়া ব্যক্তি।