আপনার আয়কর ফাইলে যদি জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সঠিক বিবরণ না থাকে, তবেই বিপত্তি। আয়কর ফাইলে কীভাবে সম্পত্তির মূল্য দেখাতে হবে, সে বিষয়ে অনেকের সঠিক ধারণা থাকে না। এর ফলে অনেকের গুনতে হয় অতিরিক্ত আয়কর। এমনকি জেল বা জরিমানাও হতে পারে। জমি ক্রয় এবং বিক্রির ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা দেখা যায়। এ জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, আয়কর আইন এবং প্রচলিত প্র্যাক্টিস মাথায় রাখতে হয়। সাধারণত প্রকৃত মূল্য এবং ক্রয়মূল্য বা বিক্রিমূল্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। জমি বিক্রি করার ক্ষেত্রে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দলিলে খরচ হয়।
যাঁদের আগে আয়কর ফাইল ছিল, কোনো কারণে আয়কর ফাইলে কোনো সম্পত্তি বাদ পড়েছে, তাহলে এ বছর নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স দিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। আয়কর অফিস বিভিন্ন সময়ে সার্ভে বা নিরীক্ষা করে। এ সময় যদি বাড়ি বা ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু তারা নোটিশ পাঠাবে।
আয়কর আইন বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে যে বছরে সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রি করা হয়, সে বছরের প্রযোজ্য আইন জেনে নিয়ে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সম্পত্তির মালিকানা সাধারণত তিন ভাগে অর্জিত হতে পারে। যেমন উত্তরাধিকার সূত্রে; আপনজনের (স্বামী/স্ত্রী, পিতা/মাতা, সন্তান, ভাই অথবা বোন) কাছ থেকে দান সূত্রে এবং ক্রয়সূত্রে।
১. জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি উত্তরাধিকার এবং দান সূত্রে পাওয়া গেলে এ ক্ষেত্রে যে সংশ্লিষ্ট কর বছরে অর্জন করা হয়, সে কর বছরে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হিসেবে দেখাতে হবে। মূল্য অজানা লিখতে হবে।
২. যে পরিমাণ টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করবেন, এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, আয়কর ফাইলে সে পরিমাণ টাকার বৈধ উৎস আছে কি না।
৩. অনেক সময় আত্মীয়স্বজন বা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ বা দান গ্রহণ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, নগদে ঋণ বা দান কোনো ক্রমেই ৫ লাখ টাকার বেশি না হয়। তার বেশি হলে ক্রস চেকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। ঋণ বা দান উভয়ই একসঙ্গে যদি ৫ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বছরের আয় হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ পুরো টাকার ওপর আয়কর দিতে হবে।
৪. জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি যদি স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এবং পিতা বা মাতা কিনে দেন, সে ক্ষেত্রে আয়কর ফাইলে যিনি কিনে দেবেন তাঁর আয়কর ফাইলে টাকা থাকতে হবে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পরিশোধ করাটাই ভালো।
৫. এতে কোনো বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ কোনো আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।
৬. শুধু ফ্ল্যাট, দালান বা বাড়ি নির্মাণ বিষয়ে আয়কর ফাইলে পর্যাপ্ত টাকা দেখাতে না পারলে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট হারে আয়কর প্রদান করলে ফ্ল্যাট, দালান বা বাড়ি নির্মাণের ব্যাখ্যা থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন।
৭. বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) রেট অনুযায়ী নির্মাণ খরচ বের করতে হবে।
৮. জমির ক্রয়মূল্যের সঙ্গে জমির দলিলের খরচ যুক্ত করে জমির মূল্য দেখাতে হবে
৯. আয়কর রিটার্নের সঙ্গে দলিল বা বণ্টননামার ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
১. ক্রয় দলিল এবং বিক্রি দলিলের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে।
২. আমাদের দেশে জমি বিক্রিতে দলিলে সাধারণত কম মূল্যে দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে, যে পরিমাণ কম মূল্য দেখাচ্ছেন, তার অতিরিক্ত টাকা আপনার হাতে কালোটাকা হিসেবে গণ্য হবে।
৩. বিক্রয়মূল্য থেকে ক্রয়মূল্য এবং উৎসে আয়কর বাদ দিলে যে অতিরিক্ত টাকা পাওয়া যায়, এর ওপর আর কোনো অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে না।
৪. বিক্রি দলিলের ফটোকপি আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সংযুক্ত করতে হবে।
৫. বিক্রি করা সম্পত্তির বিবরণী থেকে সম্পত্তির ক্রয়মূল্য বাদ দিতে হবে।
১. সংশ্লিষ্ট জমিটি অবশ্যই আপনার আয়কর ফাইলে থাকতে হবে।
২. সাইনিং মানির ওপর ১৫% উৎসে কর চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
৩. ডেভেলপার কোম্পানি যখন ফ্ল্যাট হস্তান্তর করবে, আপনার আয়কর ফাইলে বর্ণনাসহ উল্লেখ করতে হবে।
১. জমির মূল্য বৃদ্ধি প্রদর্শন: আপনি যে কর বছরে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন, সংশ্লিষ্ট বছরের ক্রয়মূল্যে সম্পত্তির মূল্য দেখাতে হবে। পরবর্তী সময়ে যতই মূল্য বৃদ্ধি হোক না কেন, সব সময় ক্রয়মূল্যই থাকবে। বর্ধিত মূল্য বা বাজার মূল্য দেখানো যাবে না।
২. সিটি করপোরেশনের মধ্যে যাঁদের গৃহ পরিসম্পদ আছে এবং বিনিয়োগ করেছেন এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি যাঁদের মোট সম্পত্তি, তাঁরা ১ পাতার ফরম ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে অন্য ফরম ব্যবহার করতে হবে।
লেখক:মো. জাহাঙ্গীর আলম, আয়কর আইনজীবী; নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ।