বার্ষিক কর বিবরণী বা রিটার্ন জমায় চাকরিজীবীদের জন্য নতুন শর্ত আসতে পারে। আগামী অর্থবছর থেকে চাকরিজীবীদের অনলাইনে বার্ষিক রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেতনভুক্ত চাকরিজীবীদের বিষয়ে এমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আজ শনিবার অর্থনীতি ও বাণিজ্যবিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) করবিষয়ক কর্মশালায় এনবিআরের সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন এ কথা জানান। চাকরিজীবীদের ওপর শর্তের খড়্গ নতুন নয়। টিআইএন সংখ্যা ও রিটার্ন জমা বাড়াতে চাকরিজীবীদের ওপর এর আগেও শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তখন ওই এক বছরেই টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় সাত লাখ। পরের বছর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়।
বিষয়টা একটু ভিন্নভাবে করা হয়। শর্ত দেওয়া হয় চাকরিজীবীরা তাঁদের রিটার্ন জমা না দিলে ওই প্রতিষ্ঠান তার ওই কর্মীর বেতন বাবদ দেওয়া টাকা প্রতিষ্ঠানের খরচে দেখাতে পারবে না। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নির্বাহীদের রিটার্নের প্রাপ্তি রসিদের কপি অফিসে জমা দেওয়ার শর্ত আরোপ করে। ফলে এক বছরেই রিটার্ন জমার সংখ্যা ১৭ থেকে বেড়ে ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এমন অবস্থায় আগামী বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন দিতে হবে, এমন শর্ত আরোপের চিন্তাভাবনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অনলাইনে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা অবশ্য নতুন নয়। তখন কোনো একটি শ্রেণির পেশাজীবীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়নি, সবার জন্য ঐচ্ছিক ও উন্মুক্ত ছিল। ২০১৬ সালে অনলাইনে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা চালু হয়। প্রচার-প্রচারণার অভাবে করদাতারা তেমন উৎসাহ দেখাননি। পরের চার বছর প্রতিবছর গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা পড়ে। কিন্তু ভিয়েতনামের সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি কাজ বুঝিয়ে না দেওয়ায় চলতি মৌসুমে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থাটি বন্ধ করে দেয় এনবিআর। অবশ্য গত ১৫ নভেম্বর কর অঞ্চল-৬ এ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে এ সেবা চালু করা হয়।
বর্তমানে ৫২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছে। তাদের মধ্যে এখন প্রতিবছর গড়ে ২০ থেকে ২২ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেন। দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষ সরাসরি রিটার্ন জমা দিয়ে কর দেন।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন আরও বলেন, আমরা এখনো আয়কর দেওয়াকে জনপ্রিয় করতে পারি নাই। করদাতারা যাতে সহজে কর দিতে পারেন, নতুন প্রত্যক্ষ কর আইনে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ করা যাবে।