TAXNEWSBD
করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন না দিলে কর অফিস আপনার নথি খুলবে
শনিবার, ২২ মে ২০২১ ১৬:৩১ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও করযোগ্য আয় রয়েছে, অথচ রিটার্ন জমা দেন না- এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে অফিসকে স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের আয়কর নথি চালুর নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত করজাল ও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। ইতোমধ্যেই দেশের কর অঞ্চলগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডিসেম্বর নাগাদ নতুন ৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা রিটার্ন জমা দেন না- এমন ব্যক্তিদের আয়করের ভাষায় নন-ফাইলার বলা হয়। এখন টিআইএনের তুলনায় নন-ফাইলারদের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে ৬১ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৬ ই-টিআইএনধারী রয়েছেন। এনবিআরের হিসাবে, এর মধ্যে ৫০ লাখ টিআইএনধারীরই রিটার্ন জমা দেয়ার সামর্থ্য বা বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩ জন। অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ করযোগ্য টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেন না।

সূত্র জানায়, গত বছর থেকে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-২ স্বপ্রণোদিত হয়ে নন-ফাইলারদের কর নথি চালু করে। এতে বেশ সুফলও পাওয়া যায়। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ কর অঞ্চলে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৫৮৩ জন। সেখান থেকে রিটার্ন জমা দেন ৩২ হাজার ২৩৯ জন। এরপর আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী কর অফিস নন-ফাইলারদের তথ্য সংগ্রহ করতে সার্কেলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ হাজার ৬৪২ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৪৪ জন রিটার্ন জমা দেন। অর্থাৎ নন-ফাইলারদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

এনবিআর মনে করছে, এই পদক্ষেপ করজাল ও রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে বেশ কার্যকর। সব কর অঞ্চল নন-ফাইলারদের রিটার্ন জমায় এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ডিসেম্বর নাগাদ নতুন ৫ লাখ রিটার্ন পাওয়া যাবে।

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মোটা দাগে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক এবং নিয়মমাফিক রিটার্ন জমা না দিলে আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা আয়কর অধ্যাদেশের ৮৪ ধারা অনুযায়ী কর নির্ধারণ করে কর নথি চালু করতে পারেন।

করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপের বিধান রয়েছে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ এবং ৭৩-এ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ দিতে হবে। আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারায় বলা আছে, করদাতা যদি কোনো কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করেন, আবার এজন্য অনুমোদনও না নেন, সেজন্য তার পূর্ববর্তী বছর প্রদেয় করের ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বড় অংক- ওই পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুলও গুনতে হবে। ৭৩-এ ধারায় বলা আছে, ৩০ নভেম্বরের পর কর কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

এ পদক্ষেপের বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করলে সমস্যা নেই। এতে রিটার্ন জমা বাড়ার পাশাপাশি কর কমপ্লায়েন্স বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আংশিক বা অসত্য বা হয়রানিমূলক তথ্যের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে না। যে তথ্যের ভিত্তিতে একজন মানুষের কর নির্ধারণ করা হবে তা যেন সঠিক থাকে এবং অবশ্যই তার ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

আর ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে এটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু সাফল্য পেতে কর কর্মকর্তাদের আগের চিন্তা-চেতনা নিয়ে মানুষের কাছে গেলে হবে না। কারণ এ পদ্ধতির অতীত রেকর্ড ভালো নয়। অনেক অপব্যবহার হয়েছে। উত্তম বিচারভিত্তিক কর নির্ধারণ বা বেস্ট জাজমেন্টের নামে অনেকের কাছ থেকে জোর করে কর আদায় করা হয়েছে। এ কারণে কর বিভাগের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে। তিনি মনে করেন, এ পদক্ষেপের সাফল্য পেতে এনবিআর থেকে গাইডলাইন করে দেয়া উচিত। যেখানে কোন পদ্ধতিতে বেস্ট জাজমেন্ট করা হবে। পাশাপাশি হয়রানি করলে কর্মকর্তার শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা না করলে এ পদ্ধতি কর কর্মকর্তাদের ছুরি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়ার মতো হবে। বেস্ট জাজমেন্টের নামে যা ইচ্ছে তাই করবে।