TAXNEWSBD
এনবিপি ঋণ খেলাপিদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
রবিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২ ০১:১১ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে কার্যক্রম শুরু করে এই ব্যাংক।বিশ্বের ১৯টি দেশে এনবিপির কার্যক্রম রয়েছে। সার্বিকভাবে এর ঋণমানও ট্রিপল এ পেয়েছে। একজনকে আট কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিত এনবিপি। এর বেশি হলে প্রস্তাব প্রধান কার্যালয় করাচিতে পাঠানো হতো। বর্তমানে এ দেশে কোনো ঋণই দেওয়া হয় না। এ দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে এটির চারটি শাখা ছিল। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট শাখাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এনবিপি) দেওয়া ঋণের ৯৮ শতাংশই এখন খেলাপি, যা পরিমাণে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক বছর আগে ৯৭ শতাংশ এবং ছয় মাস আগে ৯৭ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল।

জানা গেছে, এনবিপির পক্ষে আদালত রায় দিয়েছেন। ঋণখেলাপি আসামিদের গ্রেপ্তারের আদেশও থানায় পৌঁছেছে। কিন্তু থানা থেকে জানানো হয়েছে, আসামিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির আওতাধীন উপকমিটির এক বৈঠকে এসব কথা বলা হয়েছে।

উপকমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ব্যাংকটিকে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সদস্য নীলফামারীর সাংসদ আহসান আদেলুর রহমান এবং এনবিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও কান্ট্রি প্রধান মো. কামরুজ্জামানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, এনবিপির পক্ষে রায় আসা বেশির ভাগ আসামিরই অর্থাৎ খেলাপি গ্রাহকের ঠিকানা ঢাকার গুলশান থানার অধীন। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হয় গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের সঙ্গে। আসামি না ধরার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আদালতের আদেশ আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঠিকানা ধরে ধরে আসামি খোঁজা হয়। মুশকিল হচ্ছে, এ অঞ্চলের অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। ফলে অনেক সময় আসামি ধরা কঠিন হয়ে যায়।

২০০৬-০৭ সালে গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা ছিল। এ ছাড়া প্রভিশন বেড়ে যাওয়ায় মূলধন ঘাটতি ছিল ব্যাংকের। বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকটির পাকিস্তানের প্রধান কার্যালয় থেকে ৬ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার বাংলাদেশে আনা হয়। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ৫১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বৈঠকে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলধন জোগান দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করাটা ব্যাংকটির জন্য প্রকৃত সমাধান নয়। এনবিপির পক্ষ থেকে কমিটিকে আরও জানানো হয়, জামানত নিয়ে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি জামানতবিহীন ঋণও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জামানত নিয়ে দেওয়া ঋণ এখন সুদসহ জামানতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ফলে আদায়ের পথে যেতে পারছে না ব্যাংক। জামানত হিসেবে থাকা সম্পদ বিক্রি করলে মোট ঋণের অর্ধেক আদায় করা সম্ভব।

বর্তমানে আদালতের ডিক্রিও কার্যকর হয় না এনবিপির প্রায় ৯০টি মামলা অর্থঋণ আদালতে রয়েছে বলে কমিটিকে জানানো হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬০টি মামলা হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে (এনআই অ্যাক্ট) করা। এনবিপি জানায়, ১০টি মামলায় চূড়ান্ত ডিক্রি পাওয়ার পরও তা কার্যকর হয়নি। প্রথমে টাকা আদায়ের নির্দেশনা দেন আদালত। টাকা পাওয়া না গেলে জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। কিন্তু গ্রেপ্তারের আদেশ থানায় পৌঁছানো হলে থানা থেকে জানানো হয়, আসামিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আদালত গ্রাহকের সম্পত্তির মালিকানা ব্যাংককে দিলেও ব্যাংক সে সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে। আবার ভূমি অফিসে গিয়েও দেখা দেয় সম্পত্তি হস্তান্তরে জটিলতা।

এনবিপির ঋণখেলাপিদের একজন হলেন হোটেল আমারির চেয়ারম্যান অশোক কেজরিওয়াল। ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সম্প্রতি মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমার ঋণ ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা।

বহুবার আবেদন করেছি যে কিস্তি করে টাকা দেব। কিন্তু এনবিপি নিতে চায় না। অশোক কেজরিওয়াল টাকা দিতে চাইছেন কিন্তু এনবিপি কেন নিতে চাইছে না, তা জানতে চাইলে ব্যাংকটির সিইও মো. কামরুজ্জামান বলেন, তিনি (অশোক কেজরিওয়াল) লম্বা সময় চান। আর আমরা চাই কম সময়। প্রধান কার্যালয়ে তাঁর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।

সরকারি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনবিপির এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের রহস্যজনক কারণে ধরছে না পুলিশ।

উপকমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, তথ্য-উপাত্ত যাচাই ও আলোচনার কাজ চলছে। সরকারি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির প্রতিবেদন তৈরির আগে এ ব্যাপারে তিনি আর কিছু বলতে রাজি নন ।