TAXNEWSBD
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক
শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল ২০২২ ২১:২৬ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

দুই ক্যাসিনোকে অব্যাহতির বিরুদ্ধে আপিল করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ এপ্রিল এ মামলার রায় হয়। মূল আসামি ফিলিপাইনের আরসিবিসিসহ ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো রায় হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হয়নি বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, মামলাটির আংশিক রায় রয়েছে। মামলার আসামি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) এবং ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্য থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মামলা ৮ এপ্রিল খারিজ হয়ে গেছে বলে ফিলিপাইনের এনকোয়ারার ও ফিলস্টার নামক দুটি সংবাদমাধ্যমে গত সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর দুদিন পরই গতকাল বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গতকালই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ আংশিক রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আদালতে মামলাটি করেছিল। মামলার মূল আসামি ফিলিপাইনের আরসিবিসি। মামলা চলার পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই দাবি করে আরসিবিসি নিউইয়র্কের আদালতে আবেদন করে। তার রায় এখনো হয়নি বলে বিবৃতিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিউইয়র্কের আদালত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ইতিবাচক রায় দেবেন বলে আশাবাদী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর। বিবৃতিতে এ কথাও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বিবৃতিতে বলেছে, মামলা করার পর কোজেন ও কনর বিবাদীদের নোটিশ দেয়। নোটিশ পেয়ে আরসিবিসিসহ পাঁচ বিবাদী আদালতে মামলা চলার পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই দাবিতে মামলার খারিজ আবেদন করে। রিসোর্ট ও ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবেরি ও আরেক ক্যাসিনো পরিচালনাকারী ইস্টার্ন হাউয়াইকে এবং ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং নামের এক ব্যক্তি খারিজ আবেদন করলে শুনানি হয় ২০২১ সালের ১৪ জুলাই। দুই মাস পর ১৪ অক্টোবর আরসিবিসি, লরেনজো তান ও রাউল তানের খারিজ আবেদনের ওপরও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
নিউইয়র্কের কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায় দিয়েছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাউয়াইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের আবেদন খারিজ করে তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের জবাব দিতে বলেছেন। আর আরসিবিসি, লরেনজো তান ও রাউল তানের ব্যাপারে আদালত এখনো কোনো রায় দেননি।

রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারের জন্য ২০২০ সালের ২৭ মে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কয়েক বছর ধরে জটিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ অর্থ সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয় ১০৩ পৃষ্ঠার এজাহারে। মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল আরসিবিসি এবং ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়। সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডে রাখা এ অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয় আরসিবিসিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিবৃতিতে আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা মামলায়ও আরসিবিসির আবেদন একবার খারিজ করা হয়েছিল। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, নিউইয়র্কে অবস্থিত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন হিসাবে চুরি যাওয়া অর্থের লেনদেন এবং এসব হিসাব থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো সবই নিউইয়র্ক থেকে হয়েছে বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনোর টেবিল থেকে হাতবদল হতে হতে ওই অর্থের গতিপথ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত অজানা। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপাইন সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেয়। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে মামলা চলমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে বলেন, অব্যাহতি পাওয়া দুজনের উদাহরণ টেনে অন্যরাও অব্যাহতি নেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা যাতে হতে না পারে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। আর এ ঘটনায় সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন এত বছরে শেষ না হওয়াটাও দুঃখজনক। এ বিষয়ে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইন সরকার তাদের দেশের আদালতে একটি মামলা করেছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই মামলার রায় হয়। এতে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোক দোষী সাব্যস্ত হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলারও তিনি আসামি। রিজার্ভ চুরির পর বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সালে মতিঝিল থানায়ও একটি মামলা করেছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ মামলার তদন্ত করছে এখনো।