বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
সেটি না করলে জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
তবে, রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেবার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা জটিল কোন বিষয় নয়।বে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে আইনগত ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী বেশ কিছু আয়, করের আওতায় পড়ে।
যেমন চাকরি থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া অর্থ, কোন সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফলে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি হতে আয়। আর আছে অন্যান্য যার মধ্যে পড়তে পারে অনেক কিছু।
আপনার ব্যক্তিগত আয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ডিবেঞ্চার এবং অন্যান্য স্থাবর সম্পদের বিবরণ আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
যদি আপনি কোন সম্পদের বিবরণ রিটার্নে তুলে না ধরেন, তাহলে সেটি বৈধ থাকবে না এবং আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়েতে পারেন।
ঢাকার একজন আয়কর কনসালট্যান্ট মো. কামরুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সম্পদের স্বচ্ছ বিবরণ না দিয়ে অনেকে বড় ধরনের ভুল করেন।সেক্ষেত্রে সম্পদ গোপনের অভিযোগে পরবর্তীতে আয়কর দাতাকে নানা ধরনের আইনগত ঝামেলা পোহাতে হয় বলে উল্লেখ করেন মি. আলম।
চাকরিজীবী হলে বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার বিবরণ, ব্যাংকে টাকা জমা থাকলে সুদ থেকে পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হলে সেটির ফটোকপি এবং মুনাফা বাবদ পাওয়া টাকার সার্টিফিকেট দিতে হবে। এজন্য সব ধরনের কাগজপত্র সর্বক্ষণ কপি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
আপনি চাইলে নিজে রিটার্ন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারেন অথবা একজন ভালো আয়কর আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন।
ভালো আয়কর আইনজীবী থাকাটাও জরুরি। অনেক সময় আইনজীবীদের ভুলের কারণে করদাতা ঝামেলায় পড়তে পরেন।
আইনজীবী আপনার আয়, ব্যয় এবং সম্পদের পরিমাণ কিভাবে তুলে ধরছেন সেটি খেয়াল করবেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আয়কর আইনজীবীদের কারণে অনেক সময় আয়কর বিভাগ এবং করদাতাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা যদি নিজেই নিজের রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তাহলে সেটি সবচেয়ে ভালো, বলেন মি. মজিদ।
যারা প্রথমবার রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তারা ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। সম্পদের বিবরণ দাখিলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকুন। কোন কিছু লুকানোর চেষ্টা করবেন না।
অনেকে মনে করেন, প্রথমবার সব সম্পত্তির বিবরণ না দিয়ে ধাপে-ধাপে প্রতিবছর সেগুলো দেখানো হবে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা।
বিষয়টি যদি আয়কর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তাহলে আপনি আইনগত ঝামেলায় পড়তে পারেন।
আয়কর কনসালট্যান্ট মো. কামরুল আলম বলেন, পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে কোন ফাইল অডিট হতে পারে। সেক্ষেত্রে গরমিল পাওয়া গেলে বড় অংকের জরিমানা হতে পারে বলে মি. আলম উল্লেখ করেন।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ধরুন, কারো দুই কোটি টাকা আছে। কিন্তু তিনি সেটা রিটার্ন দাখিলের সময় দেখালেন না। যদি তদন্তের মাধ্যমে এটি বেরিয়ে আসে, তাহলে আয়কর বিভাগ প্রশ্ন করেতে পারে, কেন এটা লুকানো হলো? এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে বের হয়ে আসা সহজ নয়।