TAXNEWSBD
আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে খসড়া কাস্টমস অ্যাক্ট ও খসড়া আয়কর আইন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে সরকার
সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ২৩:২৩ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় ইআরএফের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেন, বাজেটে যদি নগদ টাকা দেয়া হয় ও ইনসেন্টিভ দেয়া হয় তাহলে মনে হয় আমি পেলাম। ইন্ডাইরেক্ট যখন যায় তখন মনে হয় আমি কিছু পেলাম না। বাজেট করা হয় নিম্ন শ্রেণীর অবস্থার উন্নতির জন্য। লোয়ার মিডল ক্লাসকে মিডল ক্লাসে আনার জন্য। মিডল ক্লাসকে আপার মিডল ক্লাসে নেয়ার জন্য। পার কেপিটা ইনকাম বাড়ানো জন্য। কিন্তু আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, আমরা কী পেলাম, আমার হাতে এনে দাও, আমার কাছে এনে দাও। এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। বাজেটে কোথায় ট্যাক্সের ছাড় দেয়া হয় সেটা আমরা দেখি। তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে মেইড ইন বাংলাদেশ ধারণা নিয়ে আমরা বাজেট প্রণয়ন করি। মধ্যশ্রেণীর সংখ্যা বেশি। তাদের কনজ্যুমার আইটেমও বেশি। এ সাইজটার ডিমান্ডটা পূরণ করছে বিদেশ থেকে আনা আমদানি। মোবাইলফোন থেকে শুরু করে প্রেশার কুকার, টিভি ও ফ্রিজ। আমরা চাই বিদেশ থেকে ইম্পোর্টের শেয়ার জিরো হয়ে যাক। এটাকে টার্গেট করে যদি আমরা ইন্ডাস্ট্রিশিয়াল ডেভেলপমেন্টকে সাপোর্ট করি আমাদের পলিসি দিয়ে, তাহলে আমাদের জিডিপি, ফরেন কারেন্সি সেভিংস, ফরেন কারেন্সি ইনকাম, কর্মসংস্থান সমস্যা দূর হবে।
তিনি বলেন, আমাদের হেভি ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে হবে, বড় বড় ইনভেস্টে যেতে হবে। চ্যালেঞ্জিং ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে যেতে হবে। সেখানে দেশের বড় গ্রুপকেই যেতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসএমইতে যেতে হবে। বড়রা যদি এসএমই এর জায়গাটা খেয়ে দেয় তাহলে বড় ইনভেস্টমেন্ট কোথা থেকে আসবে। বড় শিল্পগোষ্ঠী চানাচুর বানাতে যায়। তাহলে ছোট উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখানে কে কোন ব্যবসা করবে সেটি নির্দিষ্ট করে দেয়ার দরকার আছে। এটা আমাদের বিষয় নয়। শিল্প, বাণিজ্য থেকে এটা ঠিক করে দেয়ার কথা বলেছি। এটা মনে হয় দেখার দরকার আছে। কারণ কোম্পানি আইনে নাকি এ সুযোগ অবারিত করে দেয়া আছে। দরকার হলে সেই আইন ঠিক করতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এনবিআর বদলে যাওয়ার চেষ্টা করছে আমাদের উৎসাহ দেবেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) পক্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপনস্থাপন করা হয়।

ইআরএফের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ধাক্কা সামলাতে এখন থেকেই গতিশীল রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। ডাব্লিউটিও বাউন্ড ট্যারিফ কার্যকর করার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আগামী অর্থবছর থেকেই শুরু করা দরকার। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শুল্কহার যৌক্তিক করার কাজ আগামী বাজেট থেকেই শুরু করার প্রস্তাব করছি। বাংলাদেশে শুল্কহার এলডিসিগুলোর গড় শুল্কহারের তুলনায় বেশি এবং প্রোটেকটিভ ট্যারিফ গড়ে ২৮ শতাংশ। এই হার কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি, যাতে এফটিএ করার পর রাজস্বের ধাক্কা একবারে না আসে। আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খসড়া কাস্টমস অ্যাক্ট ও খসড়া আয়কর আইন আগামী জুনের মধ্যে বিল আকারে পাস করে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে সরকার। তাড়াহুড়া করে আইন দুটি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে গিয়ে যেন সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি করের চাপ দেয়া না হয় এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। পাশের দেশ ভারতের চেয়েও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। ভারত সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে সাত লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সীমিত আয়ের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

আইএমএফের শর্তপূরণ করতে আগামী বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ বাড়াতে হবে, পরের দুই বছরেও ০.৫ শতাংশ ও ০.৭ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। এই বাড়তি রাজস্ব আহরণে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো, অটোমেশনের মাধ্যমে কর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা।
ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে দীর্ঘ দিন ধরে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালুর কথা শুনা গেলেও তার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলেও তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এনবিআরের বিভিন্ন সেবা বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে যুক্ত করাসহ ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে আগামী বাজেটে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করছি। বিভিন্ন সেবা ফি অনলাইনে এক সিøপে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
সরকার বিভিন্ন খাতে যে কর অব্যাহতি দিয়ে আসছে, এবং এর ফলে অর্থনীতিতে কী ধরনের সুবিধা আসছে তার একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন থাকা প্রয়োজন। এই হিসাব খাতভিত্তিক অব্যাহতির যৌক্তিকতা কিংবা সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
কর অব্যাহতি সুবিধা সাধারণত এক কর বছরের মধ্যে বিনিয়োগের শর্তে দেয়া হয়। কিন্তু কোনো শিল্প স্থাপন ও উৎপাদনে আসতে দেড় থেকে দুবছর সময় লেগে যায়। এ জন্য এই কর সুবিধা সাধারণত বিনিয়োগকারীরা পান না। যেমন- চলতি কর বছরে হাসপাতাল স্থাপনে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। শুধু একটি মাত্র হাসপাতাল এই সুবিধার জন্য আবেদন করেছে। এ ধরনের সুবিধা কমপক্ষে তিন কর বছরের জন্য দেয়া হলে এর সুফল মিলবে।
আগাম কর রিফান্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রস্তাব করছি। সহজে ও দ্রুততম সময়ে রিফান্ড পেলে মানুষের মধ্যে কর দেয়ার আগ্রহ বাড়বে।
দিনে দিনে এনবিআরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এর সাথে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে যুযোপযোগী করতে হবে। কোনো কোনো কাস্টমস হাউজে এখনো কর্মকর্তাদের আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করার মাধ্যমে পণ্য খালাসের ঘটনা শোনা যায়, যা দূর করা প্রয়োজন।
দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৮৬ লাখের মতো। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২৮ লাখ। বাকি ইটিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে শতভাগ ডিজিটাল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উপর জোর দিতে হবে। করদাতা ও কর কর্মকর্তার সরাসরি সাক্ষাৎ যতটা সম্ভব দূর করার চেষ্টা করতে হবে।