আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এক আলোচনায় করব্যবস্থা আরও সহজ ও উদার করার সুপারিশ এসেছে। আলোচকরা বলেছেন, করব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজ করতে হবে। বাজেটে সরকারের নীতি হতে হবে উদার এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব। বর্তমান বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশে এর প্রভাব এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে। প্রাক-বাজেট আলোচনা ২০২৩-২৪ : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা শিরোনামের এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। নির্ধারিত আলোচকদের বাইরে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
পুরো আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। আয়কর ও ভ্যাট, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অবকাঠামো খাত এই চার বিষয়ের আলোচকরা বক্তব্য দেন। প্রত্যেক বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে ঢাকা চেম্বারের প্রস্তাবের ওপর প্রতিবেদন প্রচার করা হয়।সালমান এফ রহমান বলেন, যাঁদের আয় করযোগ্য, তাঁদের সবাইকে কর দিতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর উচিত এ কাজে এনবিআরকে সহযোগিতা করা। তিনি মনে করেন, করব্যবস্থা অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় হতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। তবে কর অব্যাহতি এবং ছাড় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এখন নানা চ্যালেঞ্জ আসছে। উন্নত দেশেও মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশ রপ্তানি খাত চাঙ্গা রয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ছে। দেশের বাজার বড় হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ।
পূঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারী রিটেইলার বা ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। বাকিটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। অন্যান্য ফ্রন্টিয়ার বাজারে এর উল্টো। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা নিজ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় সরকারের নয়। তারা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারে। রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের মতো প্লাস্টিক, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন খাত বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পেতে পারে।পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং সময়। কভিডের সংকট সরকার সামাল দিয়েছে। বিশ্বে এখন আরেক সংকট চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও ব্যাংক বসে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী অর্থবছরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট করার সুযোগ নেই। আবার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে এবং একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যাতে ধীর না হয় এটি মাথায় রেখেই বাজেট করা হচ্ছে। সরকারকে যাতে কম ধার করতে হয় এবং সামষ্টিক অর্থনীতি যাতে স্থিতিশীল থাকে, তা মাথায় রাখতে হচ্ছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি না দিলে এর আমদানিতে কর প্রত্যাহার করার জন্য কয়েকজন আলোচকের মতকে তিনি সমর্থন করেন।