TAXNEWSBD
রাজস্ব আদায়ের চাপ বাড়ছে এনবিআরে
সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

অর্থনীতির নানা সংকটে রাজস্ব আহরণে গতি কমেছে। এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা চলতি অর্থবছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা করেছেন। পাশাপাশি নতুন করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের  শর্তপূরণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।  আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা এ বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। চলতি বছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। ব্যয়ের বাজেট বড় হচ্ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। ফলে ঘাটতি বাড়ছে। আসলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা এনবিআরের সক্ষমতা অনুসারে হওয়া উচিত। অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রার ফলে সরকারের ঋণ বাড়ছে, চাপ বাড়ছে এনবিআরের ওপর।আইএমএফের শর্ত মেনে আগামী অর্থবছরে নিয়মিত শুল্ক-কর আদায়ের অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো সংগ্রহ করতে হবে। কমাতে হবে কর ছাড়। তাই কর আদায় বাড়াতে নতুন নতুন উপায় খুঁজছেন আইএমএফের যেসব শর্তপূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এনবিআরকে, সেসব শর্ত এসেছে গত জানুয়ারির শেষের দিকে; বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বিনিময়ে । অন্যান্য খাতের পাশাপাশি এনবিআরের জন্য সময় ধরে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের একটি আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। অতিরিক্ত শুল্ক-কর হতে হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, বর্তমানে রাজস্ব আহরণ মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। ৩ দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রথম ৬ মাসে। প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক সূচকে আনা ও পরের ছয় মাসে কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে, সেটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর এনবিআরকে বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় এবং সেটা কখনই তারা পূরণ করতে পারে না। ভ্যাট ও আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। সরকারের আমদানি শুল্ক খাতে বড় ধরনের রাজস্ব এলেও আমদানি সীমাবদ্ধতায় সেটিও কমে গেছে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের রাজস্ব আহরণের ঘাটতি নিয়ে আইএমএফের যে আশঙ্কা, সেটি আমাদেরও মনে হচ্ছে। এনবিআরের সম্পদ আহরণে দুর্বলতা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের আওতা দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সরকারের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব আদায় ও ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন আগামী বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে এনবিআরকে যে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে, সেটা আদায় করা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ চলতি অর্থবছরে আট মাস শেষে ২৩ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমান কর প্রশাসন দিয়ে আগামী অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা অসম্ভব হবে। সংস্কার যদি আরও তিন-চার বছর আগে শুরু হতো, তা হলে সম্ভব হতো। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে আমদানি শুল্ক বাড়বে না। আবার মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে। তাই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও শুল্ক-কর বাড়ানো কঠিন হবে।