TAXNEWSBD
ফ্ল্যাটের মালিকানা, জমির দাম বাড়বে মূলধনী আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাবে
মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩ ১৫:৫১ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

মূলধনী আয়কর (গেইন ট্যাক্স) বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে সরকার, এতে আগামী অর্থবছরে সম্পত্তির মালিকানা আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে বিশেষ কিছু ইলেকট্রনিক্স পণ্যে শুল্ক রেয়াত অব্যাহত থাকবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।এছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার এবং এসব পণ্যের কম্প্রেসারের স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা বর্তমানে যে শুল্ক ছাড় সুবিধা পাচ্ছেন, তা আরো এক বছর পেতে পারেন।বর্তমানে ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে মূলধনী আয়কর ও ফি- এর হার দাঁড়ায় সম্পত্তির মূল্যের ১০ থেকে ১২.৫%। আগামী বাজেটে যা আরো ১ থেকে ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়তে পারে।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থবিলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থবিলের এই পরিবর্তনের প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারেন।এদিকে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক গতিমন্থরতার কারণে দেশের আবাসন খাতেও মন্দাভাব বিরাজ করছে। নতুন করে এই কর বাড়ানো হলে এ খাতের বিক্রি আরো কমে যাবে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)- এর পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন, এখন আবাসন খাতের ক্রয়-বিক্রয়ে মন্দাভাব চলছে। এই অবস্থায় ট্যাক্স বাড়ানো হবে দু:খজনক। এতে নিঃসন্দেহে বিক্রি কমে যাবে।ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধনী কর হলো- কোনো সম্পত্তি বিক্রি থেকে অর্জিত আয়। কোনো ব্যক্তি যখন জমি বা বাড়ি বিক্রি করে মুনাফা করেন, তখন তা মূলধনী আয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কর বিক্রেতার দেওয়ার কথা থাকলেও, তারা সাধারণত ক্রেতার ওপরই তা চাপিয়ে দেন।

বর্তমানে ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রেতারা ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকারের ফি ১.৫ শতাংশ এবং মূল্য সংযোজন কর দেন ২ থেকে ৪.৫ শতাংশ।২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে রিহ্যাব এই কর ও ফি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিল। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় ফ্ল্যাট বা প্লট- এর নিবন্ধনে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে সরকার এই খাত থেকে যথাযথ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির লিখিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়, অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নিবন্ধন ব্যয় খুবই বেশি। ওইসব দেশে এই ব্যয় ৪ থেকে ৭ শতাংশের বেশি নয়। অবিলম্বে এই রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো প্রয়োজন।এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের একজন সিনিয়র কর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, আমাদের অফিসে বেশকিছু আবাসন খাতের কোম্পানির ট্যাক্স ফাইল রয়েছে। কোম্পানিগুলো যত ধরনের করের ভার রয়েছে, তার সবই ক্রেতার উপর চাপায়। নিজেদের ওপর কোন করভার নেয় না।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা তৈরি হচ্ছে। প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে- বর্তমানে কর ব্যবস্থায়ও বিপুল পরিমাণ বাড়তি কর আদায় করা সম্ভব। কিন্তু, তা না করে এভাবে কর বাড়ানো যৌক্তিক সমাধান নয়।

গবেষণা সংস্থা- পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)- এর গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক টিবিএস কে বলেন, জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অনেকেই প্রকৃত দাম দেখায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত ভ্যালুয়েশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। তা না করে সহজ উপায় হিসেবে কর বৃদ্ধি যৌক্তিক পদক্ষেপ নয়।দেশে নির্মাণ সামগ্রীর দামবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত এক বছর ধরে আবাসন খাতে প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি কমে গেছে।নিবন্ধন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্লট, ফ্ল্যাট, কমার্শিয়াল স্পেস-সহ মোট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকার। আর আগের বছর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য কর রেয়াত

স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনাও করছে সরকার।এই বিষয়ে, আসন্ন বাজেটে আমদানিকৃত পণ্য প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক সুইচ এবং সকেটের স্থানীয় উৎপাদনে শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ফিনিশড সুইচ এবং সকেট আমদানিকারকরা উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে।তারা উল্লেখ করেন, আসন্ন বাজেটে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন উপায় প্রস্তাব করা হবে।একইসঙ্গে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার এবং কম্প্রেসারের স্থানীয় নির্মাতারা আরও এক বছরের জন্য বর্তমান শুল্ক রেয়াত সুবিধা পেতে পারেন।ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, মাল্টি-কুকার এবং প্রেসার কুকার তৈরিতে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি আরও এক বছর বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।এনবিআর আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসব বিষয়ে পৃথক সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) জারি করবে।