আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করদাতা খুঁজতে বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগ দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য সংস্থাটি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা সংযোজন করবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। বাজেটে এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে নতুন করদাতা চিহ্নিত করা ও তাদের রিটার্ন দেওয়ার কাজে সহায়তা করবে বেসরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া এজেন্টরা।এ ছাড়া নতুন অর্থবছরে বাড়তে পারে বিদেশ ভ্রমণের খরচও। কারণ, আগামী অর্থবছরে ভ্রমণ কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। পাশাপাশি ধনীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরের করহারের সীমা বাড়তে পারে। তাতে ধনীদের ওপর বাড়বে কর। এভাবে মানুষের জীবনযাপনকে প্রভাবিত করবে এ রকম বেশ কিছু উদ্যোগ থাকছে আগামী বাজেটে। যার প্রভাবে কেউ পাবেন স্বস্তি, কাউকে গুনতে হবে বাড়তি কর। আবার করজালের বাইরে থাকা অনেককে আসতে হবে এনবিআরের করের আওতায়।দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৮৭ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন মাত্র ৩০ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর পৌনে ২ শতাংশ। এখন উপজেলা এবং গ্রামগঞ্জে পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। তাতে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও করযোগ্য আয়ের লোকজন আছেন। এমনকি শহর এলাকারও অনেক করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত, এনবিআর জনবলের অভাবে নতুন করদাতার সংখ্যা খুব বেশি বাড়াতে পারছে না।
আগামী বাজেটে করদাতাদের চিহ্নিত করে তাঁদের টিআইএন দেওয়া এবং রিটার্ন দেওয়ায় সহায়তা করার জন্য বেসরকারি খাতের এজেন্ট নিয়োগের জন্য একটি ধারা আয়কর অধ্যাদেশে সংযোজনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ওই এজেন্টরা কারা করদাতা হওয়ার যোগ্য, তা চিহ্নিত করে টিআইএন নিতে সহায়তার পাশাপাশি রিটার্ন তৈরি, কর হিসাব করাসহ নানা ধরনের সহায়তাও করবেন। এমনকি অনলাইনে রিটার্ন জমাও দিয়ে দেবেন। এ জন্য অবশ্য নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পাবেন এজেন্টরা।তবে বাজেট এলেই নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবার চোখ থাকে কোথায় খরচ বাড়ল, কোথায় কমল, তা জানতে। কারণ, বাজেটের নেওয়া উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। আগামী বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। বাজেটে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে বাড়ি-গাড়ি কেনায় যেমন খরচ বাড়তে পারে, তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে আয়করেও কিছুটা ছাড় থাকতে পারে। আগামী বাজেটে আপনার জন্য যেমন সুখবর থাকছে, তেমনি থাকছে দুঃসংবাদও।আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে থাকতে পারে এমন কিছু সিদ্ধান্তের কথা।
বিদেশ ভ্রমণে কর বাড়তে পারে। আট বছর আগে ভ্রমণ কর বাড়ানো হয়েছিল। তখন থেকে দেশ ও অঞ্চলভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্রমণ কর দিতে হয়। এ বছর সেই ভ্রমণ কর বাড়ানো হতে পারে। সর্বনিম্ন ৭৫০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে এই ভ্রমণ কর সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে। তবে প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৯ মাসের বেশি সময় ধরে দেশে ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। তাতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। বাড়তি খরচের চাপে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সংসারের বাড়তি খরচের চাপে সঞ্চয় নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পক্ষে কর দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে। আগামী বাজেটে এসব ছোট করদাতার জন্য সুখবর থাকছে বলে জানা গেছে।আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। ফলে করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তাঁদের খরচ কিছুটা কমবে।এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় মিলতে পারে ছাড়। বর্তমানে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হয় না।
ছোট করদাতাদের জন্য ভালো খবর থাকলেও ধনীদের জন্য আগামী বাজেট হতে পারে খারাপ । কারণ, ফ্ল্যাট-প্লট, দামি গাড়ি কেনায় খরচ বাড়তে পারে। ফ্ল্যাট-প্লট, গাড়ির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন করার সময় ক্রেতাকে নানা ধরনের কর দিতে হয়। যেমন গেইন ট্যাক্স, ভ্যাট, স্ট্যাম্প মাশুল, নিবন্ধন মাশুল, স্থানীয় সরকার কর। সব মিলিয়ে ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ কর দিতে হয়। এই করহার বাড়ানো হতে পারে। সব মিলিয়ে করভার হতে পারে ১৫ শতাংশ।অন্যদিকে আপনার জিপ গাড়ি চালানোর শখ দমিয়ে রাখতে হবে। দামি গাড়ি আরও দামি হতে পারে। ২০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে। এনবিআরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ এবং ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। এই স্তরে সাধারণত জিপ ও এসইউভি গাড়ি আমদানি হয়। অন্যদিকে আপনার একটি গাড়ি আছে, পারিবারিক ও অফিসের প্রয়োজনে আপনি আরেকটি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা থাকলে বাদ দিতে পারেন। কারণ, আগামী বাজেটে দ্বিতীয় গাড়ির অগ্রিম কর বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে। গাড়ির ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় এই কর দিতে হয়।