রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর তাগিদে ধনীদের আয়করের হার আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাড়তে পারে। এ জন্য সর্বোচ্চ আয়করের হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হতে পারে। এদিকে ট্রাস্টের আয় থেকে কর ফাঁকি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এনবিআর।অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ বাজেট-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আগামী অর্থবছরের বিভিন্ন কর প্রস্তাবের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থ বিলে আয়কর বিষয়ে যেসব প্রস্তাব করবেন, সেখানে আয়করের প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আসছে।বর্তমানে প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোনো কর দিতে হয় না। ৩ লাখ টাকার পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ। পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে আয়ের ওপর ১০ শতাংশ। পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কর ২০ শতাং। এর ওপর আয়ের ক্ষেত্রে করহার ২৫ শতাংশ। ধনী করদাতারা এই সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করের আওতায় পড়েন। এক সময় এ হার ৩০ শতাংশ ছিল, যা করোনার সময়ে কমানো হয়। আবার এ ক্ষেত্রে করের হার বাড়তে পারে। অন্যান্য স্তরেও করহারে পরিবর্তন আসতে পারে।
আগামী অর্থবছরে জমি নিবন্ধনের খরচও বাড়তে পারে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলাকায় বর্তমানে জমি বা বাড়ি বিক্রয়ের দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মোট মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে কর কাটা হয়। আগামীতে তা বেড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া রাজউক এবং সিডিএবহির্ভূত এলাকায় জমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কর ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে।চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর খাত থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে অর্থবছরেরর প্রথম ৯ মাসে এ খাত থেকে রাজস্ব এসেছে ৭০ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়কর খাত থেকে ৮৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ করে এনবিআর।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতে সর্বোচ্চ আয়কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। আগামী বাজেটে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা দেখা যাচ্ছে, আয় বৈষম্য বেড়েছে। এ অবস্থায় ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আহরণ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়ানো উচিত।