প্রথমবারের মতো সরকার করদাতাদের টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাতিলের সুযোগ দিচ্ছে। ফলে একবার টিআইএন নিলে সারা জীবন প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি মিলবে। যেসব করদাতা বিভিন্ন কারণে রিটার্ন জমা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছেন তাদের জন্য টিআইএন বাতিলের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমদিন থেকে টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ খবর জানায়। বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশে টিআইএন বাতিল বা স্থগিত করা সংক্রান্ত ধারা নেই। ফলে একবার টিআইএন নিলে জীবনভর প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের বিবরণী জানিয়ে রিটার্ন জমা দিয়ে যেতে হবে। এমনকি করদাতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারদেরও সে জের টানতে হয়। মৃত্যুর সময় করদাতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা ব্যবসা থেকে কোনো আয় হলে তার পক্ষে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে। আগামী অর্থবছর থেকে করদাতারা যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করে কর কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বন্ধের জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলতি বছরের ১ জুন জাতীয় সংসদের নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ প্রস্তাব দেওয়ার কথা রয়েছে। আয়কর অফিসের একজন জ্যেষ্ঠ কর কর্মকর্তা বলেন, আয়কর জমা দেওয়ার জন্য সব টিআইএনধারীকে নোটিস পাঠানো হয়।
কোনো করদাতারা মারা গেছেন বা দেশ ছেড়েছেন সেটা জানা না থাকার কারণে সবাইকে নোটিস পাঠানো হয়। নিষ্ক্রিয় টিআইএনগুলোর জন্য আর সময় নষ্ট করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টিআইএনধারীরা তাদের নিবন্ধন বাতিল করার উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ আবেদন করলে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে টিআইএন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে চাইলে তারা কর বিভাগে আবেদন জমা দিয়ে টিআইএন পুনরায় চালু করতে পারবেন। বর্তমানে এনবিআরের অধীনে ৮৬ লাখ টিআইএনধারী রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩২ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, টিআইএন বাতিলের বিধানটি চালু হলে প্রকৃত করদাতার সংখ্যা এবং কতজন নিয়মিত কর দিচ্ছেন সেটাও জানা যাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানান, সংশ্লিষ্ট কর দফতর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর এনবিআরের আইসিটি শাখা সার্ভারে টিআইএন নিষ্ক্রিয় করে দেবে। কর আইনে নিবন্ধন বাতিলের বিধান চালু করা কর্মকর্তা ও করদাতা উভয়ের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বাংলাদেশের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে। তা থেকে কেউই রেহাই পাবেন না। আবার একই ধারায় রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক, এমন কিছু পেশাজীবী বা শ্রেণির কথাও বলা হয়েছে।