TAXNEWSBD
চলতি বছর রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কবলে আর্জেন্টিনা, ক্রেতা-বিক্রেতারা দিশাহারা
রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:১৭ পূর্বাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

আর্জেন্টিনায় বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার গত আগস্ট মাসে ১২৪ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির এই হার ১৯৯১ সালের পর সর্বোচ্চ। ফলে দেশটির সামগ্রিক জীবনযাত্রা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। আগস্ট মাসে আর্জেন্টিনায় ধারণার চেয়ে জিনিসপত্রের দাম বেশি বেড়েছে। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে পণ্যের দামে পার্থক্য অনেক বেশি, ফলে ক্রেতারা সস্তা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক দোকান আবার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছে। এদিকে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে আর্জেন্টিনায় মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। বাস্তবতা হলো, বিশ্বের অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি বার্ষিক ১২ শতাংশে উঠলেই মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়, সেখানে আর্জেন্টিনার মাসিক মূল্যস্ফীতির হার এই পরিমাণ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে আর্জেন্টিনায় দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগামী অক্টোবর মাসে আর্জেন্টিনায় সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের ঠিক আগে এ রকম উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের ওপর সাধারণ জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের পাশে এক মুদিদোকানে কেনাকাটার সময় লরা সেলিজ নামের এক ক্রেতা রয়টার্সকে বলেন, প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, যেন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে যাচ্ছে। এতে মানুষের জীবন যাপন করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, কিছুটা কম দামে জিনিস কিনতে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরতে হয়।

লরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর ৫৯ বছর বয়সী স্বামী ফার্নান্দো ক্যাব্রেরা ফল ও সবজির দাম তুলনা করতে ক্যালকুলেটরে অঙ্ক কষছিলেন। তিনি বলেন,‘ এইভাবে হিসাব-নিকাশ করে মূল্যস্ফীতিকে হারানোর চেষ্টা করছি বা অন্তত প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করছি।’

আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষণে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, চলতি বছর মূল্যস্ফীতির হার ১৬৯ শতাংশে উঠবে, অথচ আগের মাসে ধারণা ছিল, মূল্যস্ফীতির হার ১৪১ শতাংশে উঠবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে আগের মাসের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ৯ দশমিক ১ শতাংশ।

বর্তমানে আর্জেন্টিনা বড় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। দেশটির মুদ্রা পেসোর ধারাবাহিক দরপতন, তিন অঙ্কের ঘরের মূল্যস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতিবাচক রিজার্ভ ও কৃষিতে খরার কারণে দেশটির অর্থনীতির ওপর আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো আর্জেন্টিনাও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনও করেছে আইএমএফ। সেই ঋণের একাধিক কিস্তি পেয়েছে দেশটি।

আর্জেন্টিনার আর্থিক সংকট দেশটির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন দেশটির উদারপন্থী নেতা হাভিয়ের মাইলি। তিনি আইএমএফের ওপর দেশের নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনার কথা বলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অন্য প্রধান প্রার্থীরা হলেন দেশটির অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসা ও রক্ষণশীল দলের রাজনীতিবিদ প্যাট্রিসিয়া বুলরিচ। এই নির্বাচনী অনিশ্চয়তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে—বিষয়টি ১৯৮০-এর দশকের অতি মূল্যস্ফীতির স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে। দেশটির স্থানীয় অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড্যামিয়ান ডি পেস বলেন, কিছু কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে মূল্যস্ফীতি ১৮০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদিও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে কমেছে, লাতিন আমেরিকার বাকি দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নেমে এলেও আর্জেন্টিনার মূল্যস্ফীতি তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় দেশটির অর্থমন্ত্রী মাসা গত বুধবার আইএমএফের দিকে আঙুল তুলে আগস্ট মাসকে কঠিন সময় হিসেবে অভিহিত করেন। এ ছাড়া শ্রমিকদের জীবনে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব কমানোর জন্য কর কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে দেশটিতে মুদ্রার ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, এতে আর্জেন্টিনার সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বড় ধাক্কা খেয়েছে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা পণ্যদ্রব্য পাঠানোর আগে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির জটিল চক্রের মুখে পড়ছেন। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতিজনিত অনিশ্চয়তার কারণে পণ্যের ঘাটতিও তৈরি হয়েছে বাজারে; ব্যবসায়ীরাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

৫৩ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মার্সেলো ক্যাপোবিয়ানকো রয়টার্সের কাছে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ যা ভাবে, তিনিও তা-ই ভাবছেন, অর্থাৎ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। স্থানীয় মুদ্রা পেসোর অবমূল্যায়নের কারণে তিনি মাংসের দাম ডলারে প্রদর্শন করছেন। বুয়েনস এইরেসের উপকণ্ঠে অলিভোসে কসাইয়ের দোকানে ক্যাপোবিয়ানকো বলেন, কীভাবে এই মাসের ভাড়া আমরা দেব, জানি না; বিদ্যুৎ বিলের অর্থও কোত্থেকে আসবে, জানি না।’

মার্সেলোর ভাষ্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ ক্রুদ্ধ। বর্তমানে অনেক মানুষের এক কেজি মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, ফলে মানুষের ক্রুদ্ধ হওয়ার অধিকার আছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে কী করব, তা-ই ভাবছি। এই পরিস্থিতি যদি আরও কিছুদিন চলে, তাহলে দোকান বন্ধ করে দিতে হবে।