এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এ সময় করদাতাদের সুবিধার্থে দেশের সব কর অঞ্চলে নভেম্বরজুড়ে মিনি করমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেবা মাসে মেলার আবহে করদাতারা যেন রিটার্ন জমা দিতে পারেন, সে বিষয়ে এনবিআর এরই মধ্যে কর অঞ্চলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। করদাতাদের সুবিধার্থে কর অঞ্চলগুলোয় রিটার্ন গ্রহণ বুথ, ফর্ম বিতরণ, হেল্প ডেস্কসহ সব ধরনের সেবা দেয়া হবে।জাতীয় আয়কর দিবস উদযাপনে গঠিত কমিটির সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আয়কর মেলার আদলে কর অফিসে করদাতারা পাবেন ওয়ানস্টপ সেবা। এ ছাড়া অনলাইনে এ চালান, বিকাশ, রকেট, নগদ কিংবা ইউক্যাশ ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর দেয়ার সুবিধা পাবেন করদাতারা।সেবা মাস উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে কর অঞ্চলগুলো জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কর অঞ্চলগুলো নিজ নিজ অফিসের নিচে প্যান্ডেল বা অফিসে নির্ধারিত স্থানে বুথ স্থাপন করে আলাদাভাবে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা করবে। সেই বুথে রিটার্ন জমা নেয়া হবে।কর পরিদর্শকসহ সব অফিসারকে মেলার মতো করদাতাদের সেবা দিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এনবিআর থেকে। এক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বা হয়রানির প্রমাণ পাওয়া গেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। অবশ্য আয়কর দিবস উদযাপন এবং সর্বোচ্চ করদাতাদের সম্মাননা দেবে এনবিআর। এ লক্ষ্যে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আয়কর দিবস উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র, র্যালি, ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো, সচেতনতামূলক টকশোর আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে ১৪১ জন সর্বোচ্চ করদাতাকে সম্মাননা দেয়া হবে।
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনা মহামারির কারণে আয়কর মেলা বন্ধ ছিল। মহামারি শেষ হলেও বাড়তি খরচের বিবেচনায় এবারও আয়কর মেলা আয়োজনে না করা সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।এনবিআরের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো : আয়কর মেলার পরিবর্তে কর কমিশনার অঞ্চলগুলোতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য করদাতাদের সেবা দেওয়া।প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান বা কার পার্কিং এরিয়ায় রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে রিটার্ন গ্রহণের পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে রিটার্ন দাখিলকারী করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের সঙ্গে রিটার্ন দাখিলের জন্য উৎসাহ প্রদানে উপহার দেয়া হবে। সব কর কমিশনার সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।প্রতিটি কর অঞ্চলের নিজস্ব ওয়েবসাইট তথ্যসহ হালনাগাদ করতে হবে। ওই ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফর্ম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ করতে হবে। কর অঞ্চলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখবে। অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের জন্য অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ কর তথ্য সেবা দেয়া হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নভেম্বর মাসে দুইদিন করদাতাদের রিটার্ন গ্রহণ ও কর তথ্য সেবা দেয়া হবে। নভেম্বর মাসব্যাপী করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর তথ্য সেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নভেম্বরের আগে প্রেস ব্রিফিং করা। সব কর অঞ্চলের কমিশনাররা তাদের নিজ নিজ কর অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনাবলী অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে জাতীয় ট্যাক্স কার্ড ও ঢাকার কর অঞ্চলগুলোর সেরা করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ৪টি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে ও অন্য সব কর অঞ্চল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলা ও সিটি করপোরেশনভিত্তিক সেরা করদাতা সম্মাননা দেয়া হবে। আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস ২০২২ উদযাপন করা হবে। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।দেশে কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলার আয়োজন করে এনবিআর। শুরুতে সাড়া না পাওয়া গেলেও পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের কাছে এ মেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিবছর করদাতাদের বড় অংশ মেলায় রিটার্ন দিতেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত মেলা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।