TAXNEWSBD
একগুচ্ছ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে এনবিআর
রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:২৫ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরবর্তী কিস্তির অর্থ পেতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে কর অব্যাহতি কমানোসহ রাজস্ব খাতে একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঋণ কর্মসূচির আওতায় সংস্থাটির সঙ্গে সরকার যে মেমরেন্ডাম অব ইকোনমিক ফাইন্যান্সিয়াল পলিসি (এমওইএফপি) গ্রহণ করেছে তাতে এসব সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।এমওইএফপি অনুযায়ী এনবিআর চলতি মাসের শেষে ভ্যাট ও কাস্টমস শাখায় একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করবে। এ ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে ভ্যাট শাখা অডিট অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডাইরেক্টরেট বাস্তবায়ন করা হবে। একই সময়ের মধ্যে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়াতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। নতুন শুল্ক আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাস্টমস প্রশাসন গড়ে তোলা হবে।

মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশলের আওতায় অর্থনীতিতে কম প্রভাব ফেলে এমন অব্যাহতি তুলে দেওয়ার পাশাপাশি কর কাঠামো সহজ করা হবে যা বাস্তবায়নে আইএমএফ কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আগামী জুন শেষে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক খাতে বছরের পর বছর যেসব করছাড় দেওয়া তার একটি পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এতে পরবর্তী বছর এসব ছাড় কী পরিমাণ তুলে দেওয়া হবে তার সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ও ব্যাখ্যাও থাকবে; যা দেশের কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমদানি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করা হবে। এ ছাড়া রাজস্ব বাড়াতে পরবর্তী চার থেকে ছয় বছরের জন্য আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সরকার আশা করছে, এটি চূড়ান্ত করতে আগামী বছরের শুরুতেই অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে; যা জুন পর্যন্ত সময়ে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

সরকার আইএমএফকে জানিয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় তামাক, ভূমি নিবন্ধন ও ভ্রমণ খাতে রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক গাড়ির মালিকদের বাড়তি পরিবেশ সারচার্জ আরোপ, কিছু নির্দিষ্ট পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো এবং রাজস্ব প্রশাসনের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া গত জুন মাসে নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে; যা আয়কর প্রশাসনকে আরও আধুনিক করবে এবং ইন্টারনেটভিত্তিক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি রোধে সহায়তা করবে।চলতি বাজেটে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ৩৮ ধরনের সরকারি সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন প্রদানের প্রমাণপত্র নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে করে বাড়তি ১০ লাখ নতুন করদাতা আসবে বলে সরকার মনে করছে। নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ২০২৬ সাল নাগাদ করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা হবে।

এদিকে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের পর আইএমএফ আগামী জুনে বাংলাদেশের কর আদায় ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরে আইএমএফের ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর আদায় বাড়াতে বহুমুখী কৌশল নিতে হবে। কর যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি কর অব্যাহতি বা ছাড় কমানোর সুযোগ রয়েছে। আইএমএফ এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এ বিষয়ে কাজ করতে ইতোমধ্যে একটি মিশন এসেছিল। আগামী মাসের শুরুতে আরেকটি মিশন আসবে।