আগামী মাস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট অনলাইনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে বড় ভ্যাটদাতারা। এর ফলে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ার সময় তারা প্রয়োজনীয় সব তথ্য-উপাত্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট অনলাইনের সার্ভারে পাঠাতে পারবে। এতে একদিকে রিটার্ন ও কাগজপত্র জমায় ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানের সময় বাঁচবে, অন্যদিকে ভ্যাট কর্মকর্তারা সহজেই ওই সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য–উপাত্ত যাচাই–বাছাই করতে পারবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সিমেন্ট খাতের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে এই সুবিধার আওতায় আসছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো সেভেন রিংস সিমেন্ট ও সিয়ামসিটি সিমেন্ট। এই দুটি প্রতিষ্ঠান আগামী মাসে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ার সময় তাদের বেচাকেনাসহ অর্থবিষয়ক যাবতীয় তথ্য–উপাত্ত সরাসরি ভ্যাট অনলাইন সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা দিতে পারবে। তাদের আর সনাতন পদ্ধতিতে তথ্য–উপাত্ত জমা দিতে হবে না।
ইতিমধ্যে এই দুটি কোম্পানির ভ্যাট–সংক্রান্ত তথ্য–উপাত্ত ভ্যাট সার্ভারে পাঠানোর বিষয়টি পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। উদ্বোধন হলে আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) ১৫ তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের জানুয়ারি মাসের ভ্যাট রিটার্ন দিতে পারবে। এই সময়ের মধ্যেই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কমিশনার ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সাবেক পরিচালক বলেন, ‘এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হলে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। তাঁরা ঘরে বসেই সহজে ভ্যাট রিটার্নের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য–উপাত্ত সরাসরি ভ্যাট সার্ভারে জমা দিতে পারবেন। এখনকার মতো আলাদাভাবে সনাতন পদ্ধতিতে জমা দিতে হবে না।’ এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুধু সিমেন্ট খাত নয়, উৎপাদন এবং সেবাসহ আরও কিছু খাতের কোম্পানিও এই ব্যবস্থায় আসতে ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় ২০টির বেশি কোম্পানি আছে।
২০১৮ সালে এনবিআর বড় কোম্পানিগুলোর হিসাবে স্বচ্ছতা আনয়ন ও ভ্যাট ফাঁকি রোধে সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন এক আদেশে বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার (লেনদেন) থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তখন এই সফটওয়্যার ব্যবহারে অনীহা দেখা যায়। কারণ, এই সফটওয়্যারের সঙ্গে ভ্যাট বিভাগের সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেড় শর বেশি কোম্পানি বর্তমানে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে ৫ কোটি টাকার ওপরে টার্নওভার থাকা বেশির ভাগ কোম্পানিই এখনো এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে না। এ নিয়ে গত কয়েক বছরে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একাধিক দফা বৈঠক হয়। তখন ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক তথ্য ভ্যাট কর্মকর্তাদের হাতে চলে যাবে। তথ্য–উপাত্ত কারসাজি করার শঙ্কাও তাঁরা প্রকাশ করেন।