আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের পাশাপাশি বর্তমান সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ বাস্তবতা মাথায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে চলতি অর্থবছরের চেয়ে অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আহরণে কর্মকৌশল ঠিক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় এবং অব্যাহতি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট কিছুটা সংকোচনমূলক করা হবে। বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। তবে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগামী বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। তাই বাজেটের আকার তুলনামূলক ছোট হলেও রাজস্ব বাড়াতেই হবে।এদিকে আগামী বাজেট নিয়ে অর্থ বিভাগ এবং এনবিআরের প্রস্তুতি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিতে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার গণভবনে অর্থমন্ত্রীসহ দুই সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার দিকনির্দেশনা দিতে অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। কাল এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় অর্থ বিভাগ এবং এনবিআর আগামী বাজেট চূড়ান্ত করবে। নতুন এ বাজেট আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
করছাড় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা
বর্তমানে বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৬ শতাংশ; যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। অনুপাত কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে করছাড় এবং অব্যাহতি। গত নভেম্বরে প্রকাশিত এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ করব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রেক্ষিতে জিডিপি আকার বিবেচনায় নিলে যা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ করব্যয় বলতে রেয়াত, ছাড়, অব্যাহতি, কমহারে করারোপ না করলে যে পরিমাণ আয় হতে পারত। এনবিআর এ ধরনের ছাড় আগামী অর্থবছরে কমাতে চায়।
ঋণ কর্মসূচির আওতায় করছাড় কমাতে আইএমএফের শর্ত রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় বাতিল করতে হবে। এ বাস্তবতায় আগামী ৩০ জুনের পর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা ভাবছে এনবিআর। একই সঙ্গে ৩৩ ধরনের উৎপাদনে দেওয়া করছাড় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রায় ৪৮৯টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্য এবং প্রায় ৫০টি সেবাসহ দেশীয় শিল্পের বিকাশে একাধিক শিল্প খাতে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। প্রয়োজনীয়তা ও বিভিন্ন খাতের সক্ষমতা পর্যালোচনা করে পর্যায়ক্রমে এসব অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হবে। পিআরআইর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু ছাড় প্রত্যাহার করা হলে আগামী তিন থেকে চার বছরে বড়তি ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ সম্ভব।
করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ থেকে আগামী বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না। বর্তমানে সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। নারী করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত সীমা ৫ লাখ টাকা। করমুক্ত আয়ের সীমার ওপর আয় থাকলে বাড়তি আয়ের জন্য নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হয়।
কমতে পারে করপোরেট কর হার
কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করতে এবং কর সংগ্রহ বাড়াতে আাগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর আড়াই শতাংশ পয়েন্ট কমানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন প্রতিষ্ঠানের আয়ের সাড়ে ২৭ শতাংশ কর হিসেবে আদায় করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার ২০ শতাংশ।