সদ্য শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি এবং এর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। তারপরও জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ জন্য সরকার রাজস্ব আহরণের ওপর জোর দিয়েছে। করের আওতা বাড়াতে গত কয়েক বছরে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টিআইএনের আওতায় এনেছে এনবিআর। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি সেবার বিপরীতে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে।রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পেছনে অর্থ বিভাগ মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোগত দুর্বলতা, জটিল কর ব্যবস্থাপনা ও তথ্য বৈষম্য এবং কর প্রদানে অনীহার মতো কারণগুলো দায়ী।বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এনবিআর মনে করে, বেসরকারি অংশীজনদের সহায়তা নিয়ে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা, কর আইন সহজবোধ্য করা, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, রাজস্ব প্রশাসনে ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের ব্যাপ্তি বাড়ানো, কর আদায়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছ কর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং প্রগ্রেসিভ কর ব্যবস্থা যাতে ধনীলোক বেশি কর দেবেন। এসব বিষয় গুরুত্ব দিলে রাজস্ব আহরণ সফল হবে এনবিআর।সূত্র জানিয়েছে, ডলার সংকটে থাকার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পর কর আদায়সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রও। বাংলাদেশে করজাল বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা বিভাগের এক চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ থেকে ১৬ মে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেন। সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশের করজাল বৃদ্ধিতে দেশটির ট্রেজারি বিভাগ কারিগরি সহায়তা দিতে চায় বলে জানিয়েছেন।একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের কারিগরি সহায়তা অফিস থেকে একটি প্রস্তাব প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। দেশটির কারিগরি সহায়তা উপস্থাপনায় তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা বাস্তবায়ন, আইনের সংশোধন ও বাস্তবায়ন, কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে ঝুঁকির অবসান, রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রশাসনে ন্যায্যতা উৎসাহিত করা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।নিজেদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯০ সাল থেকে আফ্রিকা, এশিয়া, সেন্ট্রাল এবং ইস্টার্ন ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের ৭০টি দেশে রাজস্ব উপদেষ্টার কাজ করেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতায় ট্রেজারি মূল্যায়নের প্রভাব এবং দেশের চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫টি দেশে রাজস্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।দেশটি উপদেষ্টার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, তাদের কারিগরি সহযোগী অফিসের উপদেষ্টারা রাজস্ব প্রশাসনে বেশ অভিজ্ঞ। তারা নীতি পরামর্শ ও আইনি খসড়া, ব্যবস্থাপনা কৌশল ও পরামর্শ, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে সিস্টেম সাজানো, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ, গাইডলাইন ও মনিটরিংয়ে অভিজ্ঞ।