TAXNEWSBD
শুল্ক ও কর বৃদ্ধির প্রভাব শুরু পণ্য সেবায়
রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬:১৭ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে পণ্য ও সেবায়। ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের দর বেড়ে গেছে। সেবার ক্ষেত্রেও একই দশা। রেস্তোরাঁ মালিকরা বাড়তি ভ্যাট নিচ্ছেন। দর বেড়েছে সিগারেটের। পোশাকের নতুন দরও কার্যকর করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। মোবাইল কল ও ইন্টারনেটের বাড়তি খরচ কেটে নিচ্ছে অপারেটরগুলো। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।সরকার অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলছেন। কেউ কেউ দেন-দরবার শুরু করেছেন ভ্যাট কমানোর। আবার কেউ কেউ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।নতুন সিদ্ধান্তে রেস্তোরাঁর খাবারে ভোক্তাকে পাঁচের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের বেশির ভাগই ছোট উদ্যোক্তা।স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই রাজস্ব বোর্ড ভ্যাট বাড়াল। এতে উদ্যোক্তারা ঝুঁকিতে পড়েছেন। রেস্তোরাঁয় গ্রাহক কমে যাচ্ছে। বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না করলে সারাদেশে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, গ্রাহকরা ভ্যাট দিতে চাচ্ছেন না। তর্ক লেগে যাচ্ছে। অবশ্য স্টার হোটেলসহ কেউ কেউ ভ্যাট নেওয়া শুরু করেছে।রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ভ্যাট কমানোর আন্দোলন করলে তাতে যুক্ত হবে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্ণধার মাধব চন্দ্র ঘোষ বলেন, ভ্যাট অফিস থেকে এসে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো নির্দেশনা দেননি। মিষ্টিতে আগের মতো ভ্যাট বহালে এক হবেন ব্যবসায়ীরা।বিস্কুটের ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অটো বিস্কুটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া।তিনি সমকালকে বলেন, ভ্যাট দেওয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কেউ এক প্যাকেট বিস্কুট কেনার জন্য আলাদা ভ্যাট দেবেন না। এটা দামের সঙ্গেই সমন্বয় করতে হবে। কম আয়ের মানুষের ওপরই চাপ বেশি পড়ল। কারণ বিস্কুট ও রুটিজাতীয় খাদ্যপণ্য বড় লোকেরা কম কেনেন। এসব পণ্যের ভোক্তা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। আগের ভ্যাটহার বহালে বুধবার এ খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে।নিজস্ব ব্র্যান্ড-সংবলিত তৈরি পোশাকের শোরুম বা বিপণিবিতানের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে এনবিআর। ফলে পোশাকের দর বেড়ে গেছে। ফ্যাশন উদ্যোগ, ফ্যাশন এন্টারপ্রেনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি ও দেশি ব্র্যান্ড কে-ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান বলেন, চিঠি দিয়েছে এনবিআর। ফলে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া উপায় নেই। অনেক পণ্যে শুল্ক-কর বেড়েছে। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। ফলে এক লাফে দ্বিগুণ ভ্যাট বাড়ানোর কারণে মানুষ পোশাক-আশাক কেনা কমিয়ে দেবে, যার প্রভাব পড়বে উদ্যোক্তাদের ওপর।

সিগারেটে চার স্তরে দাম ও শুল্ক দুটিই বেড়েছে। নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ থেকে হয়েছে ৬০ টাকা। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। মধ্যম স্তরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। উচ্চস্তরে ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। অতি উচ্চস্তরের দাম ১৬০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া লাইমস্টোন ও ডলোমাইটে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। নতুন উৎপাদন করা সিগারেট বাজারে না এলেও বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে।চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে সিগারেট কোম্পানিগুলো সিগারেট দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রতি কার্টনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরায় দর বেশি নিতে হচ্ছে। যেমন ৬ টাকার একটি ডার্বি সিগারেট ৭ এবং ১৮ টাকার বেনসন নিতে হচ্ছে ১৯।মোবাইল ফোন সেবায় খরচ বেড়ে গেছে। মোবাইল ফোনে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে এখন ৫৪ টাকারও কম ব্যবহার করতে পারছেন। আগে ব্যবহার করতে পারতেন ৫৬ টাকার কিছু বেশি।